মার্কিন কোম্পানিগুলিতে বিদেশি কর্মীদের নিয়োগে রাশ টানতে চান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর সেই লক্ষ্যে একটি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছেন তিনি। ঘোষণাপত্র অনুযায়ী, এবার এইচ-১বি ভিসার জন্য বছরে ১ লক্ষ মার্কিন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৮৮ লক্ষ) দিতে হবে। এইচ-১বি ভিসা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বহু ভারতীয় বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজ করেন। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে ভারতীয় কর্মীদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে কাজে প্রভাব পড়তে পারে। শুধু তাই নয়, আতঙ্ক ছড়িয়েছে বড় প্রযুক্তি সংস্থা মাইক্রোসফট এবং শীর্ষ বিনিয়োগ ব্যাঙ্ক জেপি মর্গানের কর্মীদের মধ্যেও।
আরও পড়ুন-'পাকিস্তানে গেলে নিজের বাড়ির...,' ফের বেলাগাম রাহুল ঘনিষ্ঠ পিত্রোদা, নিশানা বিজেপির
শুক্রবার ওভাল অফিসে এই ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘কোম্পানিগুলির কর্মী দরকার। আর এই ঘোষণাপত্র নিশ্চিত করবে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবার দক্ষ কর্মী পাবে।’ ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করার পর ট্রাম্প আশা প্রকাশ করেন যে, তাঁর এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করবে না শিল্প মহল। রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই আবহে মাইক্রোসফট এবং জেপি মর্গান তাদের এইচ-১বি ও এইচ-৪ ভিসাধারী কর্মীদের সতর্ক করে জানিয়েছে, যাঁরা বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে আছেন, তাঁরা যেন আগামীকাল অর্থাৎ ২১ সেপ্টেম্বরের আগে দেশে ফিরে আসেন। মাইক্রোসফট এক অভ্যন্তরীণ ইমেলে কর্মীদের জানিয়েছে, 'মাদের পরামর্শ, এইচ-১বি ও এইচ-৪ ভিসাধারী কর্মীরা আগামীকালই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসুন, সময়সীমা শেষ হওয়ার আগে।' এছাড়াও, যাঁরা বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আছেন, তাঁদের ভবিষ্যৎ নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত দেশ ছেড়ে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জেপি মর্গানও তাদের কর্মীদের ভিসা সংক্রান্ত আইনজীবীদের মাধ্যমে একই সতর্কবার্তা দিয়েছে। ইমিগ্রেশন আইনজীবীরা জানিয়েছেন, অনিশ্চিত পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে নির্দেশ না আসা পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ভ্রমণ এড়িয়ে চলাই সবচেয়ে নিরাপদ।
আরও পড়ুন-'পাকিস্তানে গেলে নিজের বাড়ির...,' ফের বেলাগাম রাহুল ঘনিষ্ঠ পিত্রোদা, নিশানা বিজেপির
ট্রাম্প তাঁর ঘোষণায় আইটি সংস্থাগুলিকে সরাসরি আক্রমণ করেছেন। তাঁর অভিযোগ, অনেক কোম্পানি এইচ-১বি ভিসা ব্যবস্থাকে চালাকি করে ব্যবহার করছে, ফলে মার্কিন নাগরিকরা কর্মসংস্থানে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।তিনি আরও বলেন,'এই ভিসা প্রোগ্রাম মূলত উচ্চ দক্ষতার কাজের জন্য বিদেশি কর্মী আনার উদ্দেশ্যে তৈরি হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে কম দক্ষ, কম বেতনের শ্রমিক দিয়ে মার্কিন কর্মীদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটি শুধু অর্থনৈতিক সমস্যা নয়, জাতীয় নিরাপত্তার হুমকিও বটে।' মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিকও স্পষ্ট জানিয়েছেন, এই পদক্ষেপের লক্ষ্য আমেরিকানদের জন্য বেশি চাকরির সুযোগ তৈরি করা এবং যাঁরা কম মূল্যবান বিদেশি কর্মী হিসেবে আসছেন তাঁদের দেশে ফেরানো।বাস্তবে যার প্রভাব পড়তে চলেছে মূলত ভারতীয়দের উপর। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এইচ-১বি ভিসাধারীদের মধ্যে ৭০ শতাংশের বেশি ভারতীয়। বড় প্রযুক্তি সংস্থাগুলি দীর্ঘদিন ধরেই ভারতীয় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এবং টেক বিশেষজ্ঞদের উপর নির্ভর করে এসেছে।প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষণায় বলা হয়েছে, নতুন নিয়ম কার্যকর হবে ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ থেকে আগামী ১২ মাসের জন্য। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ট্রাম্প চাইলে এই মেয়াদ আরও বাড়াতে পারেন। আগেও তাঁর প্রথম প্রেসিডেন্সি চলাকালীন এইচ-১বি ভিসা নিয়ে একাধিকবার সীমাবদ্ধতা আরোপের চেষ্টা হয়েছিল, যদিও তা আদালতে আটকে গিয়েছিল।