ঝাড়খণ্ডের রাঁচির ইসলামনগর এলাকার এক অচেনা ও নির্জন কোণে রয়েছে তবরক লজ। বাইরে থেকে এটি হোটেলের মতো দেখালেও ভেতর থেকে এটি একটি জরাজীর্ণ, অন্ধকার আর স্যাঁতসেঁতে ভবন, যেখানে ছোট ছোট ঘর ভাড়া দেওয়া হত। আর সেখানেই আইএসআইএস জঙ্গি সংগঠনের জন্য লুকিয়ে বোমা বানানোর হচ্ছিল বোমা। এই বড় চক্রের পর্দা ফাঁস করেছে দিল্লি পুলিশ এবং ঝাড়খণ্ডের সন্ত্রাস দমন শাখা।
পুলিশ সূত্রে খবর, বোকারো জেলার পেতওয়ার বাসিন্দা দানিশ বেশ কিছুদিন ধরে তাবারক লজে ১৫ নম্বর ঘরে থাকছিল আজহার দানিশ। সরকারি চাকরির জন্য এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলে জানায় দানিশ। কিন্তু আদতে আইএসআইএস জঙ্গিগোষ্ঠীকে মদত দিতে বোমা তৈরি করছিল সে। গত সপ্তাহে দিল্লি পুলিশ আরেক জঙ্গি আফতাব কুরেশিকে গ্রেফতার করেছিল। তাঁকে জেরা করেই এই ঘরের গোপন রহস্য ফাঁস হয়। আফতাবের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দিল্লি পুলিশ এবং ঝাড়খণ্ডের সন্ত্রাস দমন শাখা যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে আজহার দানিশ-সহ আরও ১২ জনকে গ্রেফতার করে।সূত্রের খবর, এর ফলে একটি জঙ্গি চক্রকে ধ্বংস করা সম্ভব হয়েছে, যারা শুধু বোমা তৈরি করছিল না, বরং নতুন লোকজনকে জঙ্গি সংগঠনে ভর্তি করছিল এবং বিজেপির শীর্ষ নেতাদের টার্গেট করার পরিকল্পনা করছিল।
আরও পড়ুন-ফের উত্তপ্ত উপত্যকা! উধমপুরের জঙ্গিদের সঙ্গে তুমুল সংঘর্ষ, শহিদ জওয়ান
এনডিটিভিকে এক সূত্র জানিয়েছে, দানিশের ঘর থেকে গান পাউডার, বোমা, প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম নাইট্রেট এবং দেশি তৈরি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানেই বোমা তৈরি হত এবং পরে সেগুলি সুবর্ণরেখা নদীতে পরীক্ষা করে দেখা হত। পটাশিয়াম নাইট্রেট বা সল্টপিটার হল এক ধরনের রাসায়নিক, যা সার তৈরিতে ব্যবহৃত হয় এবং গান পাউডারের অন্যতম উপাদান। সাদা স্ফটিকের মতো দেখতে এই পদার্থ শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে গেলে ক্ষতি হতে পারে। শুধু তাই নয়, ওই ঘর থেকে বিভিন্ন একাধিক শক্তিশালী বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্তে আরও জানা গেছে, ১৫ নম্বর ঘরটি শুধু বোমা তৈরির কারখানা ছিল না। জঙ্গি নিয়োগ কেন্দ্রও ছিল। দানিশ গত বছর থেকেই সেখানে থাকতে শুরু করেছিলেন। পরে পাকিস্তানি একজন সোশ্যাল মিডিয়া তাকে ভুল পথে নিয়ে যায়। তারপর দানিশও অন্যদের একইভাবে দলে টানতে শুরু করে। সূত্রের খবর, এই নিয়োগ এবং প্ররোচনার বেশিরভাগই করা হত 'সিগন্যাল' মেসেজিং অ্যাপে, যেটি এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন দেয়। সন্দেহ দূর করতে সেখানে সাধারণ নামের গ্রুপ বানানো হত, যেমন ‘ইন্টার্ন ইন্টারভিউ’ বা ‘বিজনেস আইডিয়া।'
আরও পড়ুন-ফের উত্তপ্ত উপত্যকা! উধমপুরের জঙ্গিদের সঙ্গে তুমুল সংঘর্ষ, শহিদ জওয়ান
এই গ্রুপগুলি ব্যবহার করা হত তহবিল জোগাড় করার জন্যও। সেই টাকায় বোমা বানানোর সামগ্রী কেনা হত। ছুরি আর রাসায়নিক পদার্থ আমাজন থেকে অর্ডার করা হত এবং দানিশের পাকিস্তানি হ্যান্ডলার তাঁকে 'পিইটিএন' (পেন্টাএরিথ্রিটল টেট্রানাইট্রেট) বোমা তৈরি শেখাত।এছাড়াও অ্যাসিটোন পারঅক্সাইড দিয়ে তৈরি আরও এক ধরনের বোমা বানানো হত, যাকে বলা হয় ‘মাদার অফ সাটান।' এই ঘরে সেই সব বোমা বানানো, পরীক্ষা এবং মজুত করা হত। তদন্তকারীরা বেশ কিছু অস্ত্রও উদ্ধার করেছে।এই জঙ্গি মডিউলের গ্রেফতার হওয়া অন্যান্য সদস্যদের পরিচয়ও মিলেছে। তারা হল, সুফিয়ান খান, মহম্মদ হুজাইফ ইয়ামান এবং কামরান কামরান কুরেশি। সূত্রের খবর, ধৃতরা ধর্মীয় স্থানে হামলার পরিকল্পনাও করেছিল।