'শান্তি এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ পাকিস্তান।' জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে আলোচনার টেবিলে বসতে ভারতকে আহ্বান জানিয়েছে পাক বিদেশ মন্ত্রক। অপারেশন সিঁদুর যে ইসলামাবাদের ভিতরে কতটা আতঙ্কের সঞ্চার করেছে তা ফের স্পষ্ট হল।সম্প্রতি পাকিস্তানের মুখোশ টেনে খুলে দিয়েছিল জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদের (জেইএম) এক কমান্ডার এবং লস্কর-ই-তৈবার এক শীর্ষ নেতা। তারপরেই ফের ভারতের কাছে আলোচনার প্রতাব দিল ইসলামাবাদ।
সাংবাদিক সম্মেলনে পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র শাফকাত আলি খান বলেন, 'একটি দায়িত্বশীল দেশ হিসেবে পাকিস্তান শান্তি, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং জম্মু ও কাশ্মীর বিরোধ-সহ সমস্ত অমীমাংসিত সমস্যার সমাধানের জন্য অর্থপূর্ণ আলোচনায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।' এরপরেই অপারেশন সিঁদুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ভারতের নেতাদের সশস্ত্র বাহিনীর যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে স্বীকার করে নেওয়া উচিত।' শুধু তাই নয়, শিখদের অন্যতম তীর্থস্থান কর্তারপুর সাহিব গুরুদ্বারের কথাও তুলে ধরেছেন তিনি। তিনি জানান, পাকিস্তান শিখ সম্প্রদায়ের বহু ধর্মীয় স্থানের গর্বিত রক্ষক এবং প্রতি বছর, তারা বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার শিখ তীর্থযাত্রীকে নিজেদের দেশে অভ্যর্থনা জানায়। পাক বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বলেন, 'সব সময়ের মতো, আমরা ভারতের পক্ষ থেকে আসা তীর্থযাত্রীদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত।' বলে রাখা ভাল, পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলা এবং তার জবাবে অপারেশন সিঁদুর-এর পর ভারত স্পষ্ট করে জানিয়েছে, পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা হলে তা পাক অধিকৃত কাশ্মীর (পিওকে) ফিরিয়ে দেওয়া নিয়ে হবে এবং সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে ।
গত আগস্টে পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রী ইশাক দারও জানান, তাঁর দেশ ভারতের সঙ্গে কাশ্মীর-সহ অন্যান্য বিতর্কিত বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনায় বসতে রাজি । কিন্তু শর্ত সম্মান ও শ্রদ্ধা বজায় রেখে আলোচনা হবে । তিনি জোর দিয়ে বলেন, 'পাকিস্তান আলোচনার জন্য ভিক্ষা চাইছে না ।' তার আগে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বলেছিলেন, কাশ্মীর দুই দেশের মধ্যে দ্বন্দ্বের মূল কারণ। তিনি ২০১৯ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের ৩৭০ ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদের অধীনে বিশেষ মর্যাদা বাতিলের সিদ্ধান্তের সমালোচনাও করেছেন। অন্যদিকে, ভারত বারবার বলেছে যে জম্মু ও কাশ্মীর দেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল এবং সর্বদা থাকবে।বস্তুত, ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট কেন্দ্র জম্মু-কাশ্মীরের স্পেশাল স্ট্যাটাস তুলে নেয়। ওই রাজ্যকে ভেঙে জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখকে ২টি আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করে কেন্দ্র।
গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের বৈসরনে জঙ্গি হামলায় মৃত্যু হয় ২৬ জন ভারতীয় এবং একজন নেপালের নাগরিকের । তাঁদের অধিকাংশই পর্যটক ছিলেন । এই হামলার দায় স্বীকার করে লস্কর-ই-তৈবার ছায়া সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফোর্স বা টিআরএফ । এরপরই পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করে কেন্দ্রীয় সরকার । পাশাপাশি ভারত-পাক সীমান্তে আত্তারি-ওয়াঘা বর্ডার বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । ভারতে বসবাসকারী পাক নাগরিকদের তড়িঘড়ি দেশে ফিরে যেতে বলা হয় । পরে ৬ মে গভীর রাতে পাকিস্তানে নটি জঙ্গি পরিকাঠামো গুঁড়িয়ে দেয় ভারতীয় সেনা । শুরু হয় অপারেশন সিঁদুর। পাকিস্তানও পাল্টা আক্রমণ করে । পরে ১০ মে দু'দেশের মিলিটারি অপারেশনস-এর ডিরেক্টর জেনারেল সংঘর্ষ বিরতিতে সম্মত হন। এরপর পহেলগাঁও হামলা ও অপারেশন সিঁদুর নিয়ে পাক-বিরোধী প্রচারে ৩৩টি দেশে যায় দেশের সাতটি দল ।