এবার একসঙ্গে মহড়া শুরু করতে চলেছে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। খুব আশ্চর্যজনক বিষয় হলেও, বাস্তবে তা সত্যি। রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ থামার কোনও নাম নেই। এদিকে, জি-২০ দেশগুলিকে কড়া জবাব দেওয়ার ডাক দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এই আবহে সবথেকে বড় মহড়ায় নামছে রাশিয়া-বেলারুশ। পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে এই মহড়া চলবে। আর এই মহড়ার অংশ হতে চলেছে তিন প্রতিবেশী দেশ- ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, রুশ হুঁশিয়ারির যোগ্য জবাব দেওয়া উচিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের। আর এরমধ্যেই রাশিয়া ও বেলারুশ একযোগে নামছে যুদ্ধ মহড়ায়। ‘ঝাপড’ নামে এই যুদ্ধের মহড়া চলবে ১২-১৬ সেপ্টেম্বর। রুশ ভাষায় ‘ঝাপড’ শব্দের অর্থ ‘পশ্চিম’। কমপক্ষে ১৩ হাজার সেনা এই মহড়ায় অংশ নেবে। তবে আসল সংখ্যাটা আরও বেশি হতে পারে।জানা গেছে, ইতিমধ্যেই বেলারুশে পৌঁছে গিয়েছে প্রচুর রুশ সেনা, সামরিক সরঞ্জাম, যুদ্ধবিমান, ট্যাঙ্ক, মিসাইল। বেলারুশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লেফটেন্যান্ট জেনারেল খ্রেনিন ভিক্টর গেন্নাদিভিচ বলেছেন, মহড়াতে পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা হবে। রাশিয়ার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ওরেশনিক মিসাইলের পরীক্ষা হবে মহড়াতে, এমনটাই জানা গিয়েছে।
এই 'ঝাপড' মহড়া-র একটা আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। কারণ, রুশ এই মহড়াতে ২০টি অংশগ্রহণকারী দেশের মধ্যে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশও রয়েছে। অপারেশন সিঁদুর-এর পর এই 'ঝাপড' মহড়াতেই প্রথম একযোগে মহড়া দেবে ভারত ও পাক সেনা। সঙ্গে থাকবে বাংলাদেশ, কঙ্গো, মালি, ইরান, নাইজার, তাজিকিস্তান। পর্যবেক্ষক হিসাবে থাকবে কম্বোডিয়া, চিন, কিউবা, কাজাকস্তান, মঙ্গোলিয়া, মায়ানমার, উত্তর কোরিয়া, সার্বিয়া, থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং উজবেকিস্তান।সূত্রের খবর, ভারত এই সামরিক ড্রিলে অংশ নেওয়ার জন্য ৭০ সদস্যের বিশেষ টিম পাঠাচ্ছে। এরমধ্যে ৫৭ জন ভারতীয় সেনার কুমায়ুন রেজিমেন্টের ব্যাটেলিয়ান, ৭ জন বায়ুসেনা ও ১ জন নৌসেনার সদস্য থাকবেন। চিন, পাকিস্তান এক গ্রুপ হিসাবে সেনা পাঠাচ্ছে এই মহড়ার জন্য।
'ঝাপড' মহড়ার লক্ষ্য কী?
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেই বেলারুশে এত বড় মাপের মহড়ায় সিঁদুরে মেঘ দেখছে ন্যাটো। সীমান্ত বন্ধের তোড়জোড় করছে পোল্যান্ড। রাশিয়ার শক্তিবৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ইউরোপেও শক্তি বাড়িয়েছে পোল্যান্ড। ন্যাটো-র ৩২ সদস্যদের মধ্যে সেনার জন্য সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পোল্যান্ডেরই।২০২৪-এ প্রতিরক্ষা খাতে জিডিপি-র ৪.১২ শতাংশ বরাদ্দ করে ওয়ার্শো। ২০২৫-এ সেই বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪.৭ শতাংশ। সম্প্রতি ৩৫ বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড প্রতিরক্ষা চুক্তি সেরেছে পোল্যান্ড। জার্মানি বা ফ্রান্সের চেয়ে জনসংখ্যা অনেক কম হলেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৃহত্তম বাহিনী পোল্যান্ডেরই। ২ লক্ষ ১৬ হাজার সেনা সমৃদ্ধ বাহিনী পোল্যান্ডের, যা ব্রিটেনের চেয়েও বেশি। ৭৫ হাজার পদাতিক বাহিনী, ১৮ হাজার নৌসেনা, ৬৫০০ নৌসেনা ও প্রায় ৩৫০০ স্পেশ্যাল ফোর্স রয়েছে ওয়ার-শ-র। রুশ হামলা ঠেকাতে ২০২৩-এ পোল্যান্ড তৈরি করে টেরিটোরিয়াল ডিফেন্স ফোর্স বা টিডিএফ। এই বাহিনী গোয়েন্দাগিরি, নজরদারি, তথ্য সংগ্রহ, সাইবার যুদ্ধের মোকাবিলা করে। ২০২২-এ ইউক্রেনে রুশ হামলার পর পোল্যান্ড সেনার শক্তিবৃদ্ধিতে বাড়তি নজর দেয়। নতুন করে ১ হাজার ব্যাটেল ট্যাঙ্ক, ৬০০-রও বেশি হাউৎজার হাতে পেয়েছে পোল্যান্ডের সেনা।