হাতে বন্দুক নিয়ে যে জওয়ান নিরন্তর শত্রু দেশের সঙ্গে লড়াই করে চলেছেন, নিজের কথা ভাবার সময় তাঁর কোথায়! দেশের অন্য প্রান্তে হয়তো সেই সময়ে আদালতে তাঁর কোনও মামলা চলছে। গৃহকর্তার অনুপস্থিতিতে হয়তো মামলা চলে যাচ্ছে পরিবারের হাতের বাইরে। অথবা অকারণে হয়তো মামলা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এই ধরনের অনিশ্চয়তা দূর করতে বিশেষ পদক্ষেপ করল দিল্লি হাইকোর্ট। এবার থেকে দিল্লিতে দেশের তিন সশস্ত্র বাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সম্পর্কিত মামলাগুলিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। রাজধানীর সব জেলা ও দায়রা আদালতকে এমনই নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি হাইকোর্ট।
দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির নির্দেশে ৭ আগস্ট রেজিস্ট্রার জেনারেল অরুণ ভরদ্বাজ কর্তৃক জারি করা এই সার্কুলারে সেনা আইন, ১৯৫০, নৌবাহিনী আইন, ১৯৫৭ এবং বায়ুসেনা আইন, ১৯৫০-এর অধীনে বিধানগুলি উল্লেখ করা হয়েছে। যা সশস্ত্র বাহিনীর কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্কিত মামলায় বিশেষ আচরণ ব্যবস্থা। ভারতীয় সৈনিক (মামলা) আইন, ১৯২৫, ২০১৮ সালে সংশোধিত, কর্মরত সেনাদের জন্য অতিরিক্ত সুরক্ষাও প্রদান করে।প্রধান বিচারপতি দিল্লির সমস্ত জেলা ও দায়রা আদালতকে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সম্পর্কিত দেওয়ানি, রাজস্ব এবং ফৌজদারি মামলার দ্রুত শুনানি এবং নিষ্পত্তি নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়াও, আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যদের সম্পর্কিত মামলাগুলির ক্ষেত্রেও এই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন-বিরোধী কণ্ঠ দমনের প্রচেষ্টা! শিকাগোতে সামরিক বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনা ট্রাম্পের : Report
ইতিমধ্যে হাইকোর্টের অর্ডার কপি দিল্লির সমস্ত জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারকদের কাছে পাঠানো হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে তিস হাজারী, রোহিণী, সাকেত, দ্বারকা এবং পাতিয়ালা হাউস কোর্ট। এনডিটিভি-তে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্য কান্ত দিল্লি হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। বিচারপতি বলেন, তিনি চান দেশের বাকি হাইকোর্টগুলিও একই পদক্ষেপ গ্রহণ করুক এবং যত দ্রুত সম্ভব দেশ রক্ষায় নিয়োজিত সেনাদের আইনি সমস্যা সমাধান হোক। এর আগে গত জুলাই মাসে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্য কান্ত জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে একটি কনফারেন্সে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি ‘নালসা বীর পরিবার সহায়তা যোজনা ২০২৫’-এর আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। নালসার পুরো কথা ন্যাশনাল লিগাল সার্ভিসেস অথরিটি। তার এগ্জিকিউটিভ চেয়ারম্যান বিচারপতি সূর্য কান্ত। নতুন এই প্রকল্পের সার কথা হল- ‘তোমরা সীমান্তে দেশের সেবা করো, আমরা তোমাদের পরিবারের খেয়াল রাখব।’
আরও পড়ুন-বিরোধী কণ্ঠ দমনের প্রচেষ্টা! শিকাগোতে সামরিক বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনা ট্রাম্পের : Report
যে জওয়ানেরা দুর্গম এলাকায় কর্মরত, অনেক সময়েই পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘ দিন তাঁরা যোগাযোগ রাখতে পারেন না। তাঁদের পরিবার কোনও আইনি সমস্যায় জড়িয়ে পড়লে গৃহকর্তা হিসাবে তাঁরা পাশে থাকতে পারেন না। ঘরোয়া কোনও সমস্যা হোক কিংবা পারিবারিক সম্পত্তি বা জমি সংক্রান্ত মামলা-সব ক্ষেত্রে জওয়ানদের সাহায্য করবে নালসা। আদালতে উপস্থিত হতে না পারলেও যাতে তাঁদের বক্তব্য সঠিক ভাবে উপস্থাপিত হয়, তা নিশ্চিত করা হবে।বিচারব্যবস্থার এই প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ), সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ), ইন্দো-টিবেটান বর্ডার পুলিশ (আইটিবিপি)-এর সদস্যেরাও।