বিগত কয়েকদিন ধরেই হাসিনাকে ফেরত পাওয়া নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে নানান কথা শোনা যাচ্ছে। সম্প্রতি বিদেশ মন্ত্রকের এক অনুষ্ঠানে গিয়ে বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম দাবি করেছিলেন, তিনি নাকি জানতে পেরেছেন যে শেখ হাসিনাকে ভারত ফেরত পাঠাবে না। এই আবহে নতুন বছরে হাসিনা প্রসঙ্গে প্রশ্নের মুখে পড়তে হল বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনকে। তাঁর থেকে জানতে চাওয়া হয়, ভারত যদি শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত না পাঠায়, তাহলে দুই দেশের সম্পর্কে কতটা প্রভাব পড়বে? এর জবাবে তৌহিদের স্পষ্ট জবাব, 'দু'টোই (ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার প্রচেষ্টা এবং হাসিনাকে ফেরানোর চেষ্টা) পাশাপাশি চলবে। শেখ হাসিনাকে ফেরানো একটা বড় ইস্যু। তবে আমাদের আরও অনেক স্বার্থ আছে। সেই ইস্যু নিয়ে চলতে হবে।' (আরও পড়ুন: এটাই কি বৈষম্য বিরোধিতার নমুনা? BCS থেকে হিন্দুদের নাম বাদে প্রশ্ন বাংলাদেশে)
আরও পড়ুন: দুর্ঘটনার ৪০ বছর পর! অবশেষে ভোপাল থেকে গ্রিন করিডর করে সরানো হল বিষাক্ত বর্জ্য
এরপর তৌহিদ বলেন, 'ভারত, চিন এবং আমেরিকার সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক। এই তিন দেশের সঙ্গেই আমাদের স্বার্থ জড়িয়ে আছে। তাই এই তিন দেশই আমাদের অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকবে। নতুন বছরে আমাদের বেশি মনযোগ দিতে হবে রোহিঙ্গা সংকটের দিকে। এই আবহে উল্লেখিত তিন দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে।' এদিকে রোহিঙ্গাদের 'অধিকার এবং নিরাপত্তার সঙ্গে ফেরত পাঠানোর' কথা বলেন তৌহিদ। তাঁর কথায়, রাখাইন প্রদেশের পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। এদিকে জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশের বিদেশ উপদেষ্টা চিন সফরে যাবেন। সেই সফর নিয়ে তৌহিদ জানান, বেজিংয়ের আমন্ত্রণে সেই দেশে যাচ্ছেন তিনি। তিনি বলেন, 'আমাদের অনের ইস্যু আছে। তবে সেই সব নিয়ে এখনই কিছু বলতে চাই না।' (আরও পড়ুন: আমেরিকায় ১৫ জনকে খুন করা 'জঙ্গি' প্রাক্তন সেনাকর্মী, তার গাড়িতে ISIS পতাকা: FBI)
প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরাতে তৎপর মহম্মদ ইউনুসের সরকার। এই আবহে সম্প্রতি বিদেশ মন্ত্রকের একটি অনুষ্ঠানে মাহফুজ আলম বলেন, 'ওনাকে (শেখ হাসিনা) তারা (ভারত) ফেরত দেবে না বলে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে আমরা শুনতে পাচ্ছি।' উল্লেখ্য, শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেরানোর আবেদন করে দিল্লিকে 'নোট ভার্বাল' দিয়েছিল ইউনুসের সরকার। তবে সেই আবেদন নিয়ে সম্প্রতি আপত্তি জানিয়েছে আওয়ামি লিগ। ইউনুস সরকারের বক্তব্য, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে বন্দি প্রত্যর্পণের চুক্তি হয়েছিল, তাতেই শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দেওয়া হোক বাংলাদেশে। তবে আওয়ামি লিগের বক্তব্য, ২০১৩ সালে ভারত এবং বাংলাদেশের যে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি হয়েছিল, 'ভুয়ো রাজনৈতিক কারণে করা মামলা' তার অধীনে আসে না। আওয়ামি লিগের অভিযোগ, হাসিনাকে খুনের ষড়যন্ত্র করে বাংলাদেশে ফেরাতে চাইছে ইউনুসের সরকার।
এই নিয়ে সম্প্রতি এক বিবৃতি প্রকাশ করে আওয়ামি লিগের তরফ থেকে বলা হয়, 'তারা বিচারের নামে সুকৌশলে শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চায়। বাংলাদেশ আওয়ামি লিগ মনে করে যে, দুই দেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তির অধীনে কোনও তাৎপর্যই নেই এই তথাকথিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রত্যর্পণের অনুরোধের। কারণ রাজনৈতিক কারণে মিথ্যা মামলা এই চুক্তির আওতায় পড়ে না। উপরন্তু, যদি ভুল বিচারের ঝুঁকি থাকে তবে এই চুক্তিটি প্রযোজ্য নয়। আজ সারা বিশ্ব জানে বাংলাদেশে আইনের শাসন বা বিচার নেই।' উল্লেখ্য, প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে গত ২৩ ডিসেম্বর দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকে কূটনৈতিক নোট পাঠানো হয়েছিল। তবে এই নিয়ে ভারত এখনও কিছু বলেনি সেভাবে। এদিকে এই ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র সম্প্রতি বলেছিলেন, 'কূটনৈতিক পত্র হস্তান্তর করা হয়েছে। এখনও সরকারি চ্যানেলে আমরা কোনও উত্তর পাইনি। এই মুহূর্তে আমরা কোনও মন্তব্য করব না, বরং ভারতের সরকারের জবাবের জন্য অপেক্ষা করব। সেই জবাবের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করা হবে। যদি বন্দি বিনিময় চুক্তি দেখা যায়, তাহলে সেখানে কোনও সময়সীমার উল্লেখ নেই। তাই ভারতের উত্তর পাওয়ার জন্যে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। আমরা একটা সময় পর্যন্ত বিষয়টি দেখব। যে কোনও ক্ষেত্রে জবাব দেওয়ার একটা স্বাভাবিক সময় আছে। সেই সময়ের মধ্যে জবাব না এলে আরও একটা তাগিদপত্র দেওয়া হবে। তবে এরপর পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, এখনই বলা মুশকিল হবে।' অর্থাৎ, প্রশাসনিক আমলা বুঝিয়ে দেন, বাংলাদেশি রাজনীতিবিদরা যতই হাসিনাকে ফেরানো নিয়ে হম্বিতম্বি করুক, এই ইস্যুতে আদতে তাদের প্রত্যক্ষ ভাবে কিছু করণীয় নেই।