'আমি মহারাষ্ট্রে মারাঠি হতে পারি, কিন্তু ভারতবর্ষে আমি হিন্দু।' মহারাষ্ট্রে ভাষা বিতর্কের মধ্যেই শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা বাল ঠাকরের পুরনো ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।কাঁধে গেরুয়া চাদর জড়ানো বাল ঠাকরেকে সেই ভিডিওতে ভাষার চেয়ে ‘হিন্দুত্ব’-কে গুরুত্ব দেওয়ার ডাক দেওয়া হয়েছে।তামিলনাড়ুর পর এবার মহারাষ্ট্র। দেশে ভাষা প্রতিবাদের পরিধি বাড়ছে। আর সেই প্রতিবাদের হাত ধরেই পুনর্মিলন হয়েছে ঠাকরে পরিবারে।
১৮ বছরের বিরোধে ইতি টেনে এক হয়েছে ঠাকরে পরিবারের দুই শাখা উদ্ধব ও রাজ। গত শনিবার আওয়াজ মরাঠিচা নামের এক বিজয় সমাবেশে এক হয়ে উদ্ধব ঠাকরে স্পষ্ট ভাষায় জানান, 'আমরা শুধুই একসঙ্গে হওয়ার জন্যই একত্রিত হইনি, একসঙ্গে থাকার জন্য হয়েছি।' প্রায় দু’দশক পর এক মঞ্চে দেখা যায় দুই তুতো ভাইকে। উপলক্ষ মহারাষ্ট্র সরকারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের উদযাপন, যেখানে হিন্দিকে প্রাথমিক শিক্ষায় বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। আর সেই পরিস্থিতিতেই সামনে আসে বাল ঠাকরের পুরনো বক্তব্য। ভিডিওটি গত শনিবার রাতে এক্স-এ পোস্ট করা হয়।
আরও পড়ুন-'দুধের সঙ্গে থুতু মিশিয়ে বিক্রি', আটক বিক্রেতা, জেহাদ দেখছে হিন্দু মহাসভা!
ভিডিওতে বাল ঠাকরেকে বলতে শোনা গেছে, ভাষাগত পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে হিন্দুত্বের চেতনায় এক হতে হবে। সেই বক্তব্য উদ্ধৃত করেই এখনকার ঠাকরে-বংশজরা দাবি করছেন, হিন্দিকে নয়, মাতৃভাষাকেই শ্রদ্ধা জানানো উচিত। এদিকে, বাবা বাল ঠাকরের আদর্শ রক্ষা করতে মরিয়া পুত্র উদ্ধব ঠাকরে। অন্যদিকে, আগ্রাসী ভাষায় বার্তা দিচ্ছেন রাজ ঠাকরে। রাজের হুঁশিয়ারি, 'মহারাষ্ট্রকে স্পর্শ করার চেষ্টা করে দেখুন, কী ঘটে।' তাঁর দাবি, কেন্দ্রের তিন-ভাষা নীতি আসলে মুম্বইকে মহারাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন করার পূর্বাভাস।এপ্রিল মাসে মহারাষ্ট্রে জাতীয় শিক্ষানীতির আওতায় হিন্দিকে তৃতীয় ভাষা হিসেবে বাধ্যতামূলক করার নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রথমে নির্দেশ ছিল, ইংরেজি ও মারাঠি মাধ্যমে প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত হিন্দি শেখা বাধ্যতামূলক। পরে সংশোধন করে বলা হয়, যদি অন্তত ২০ জন পড়ুয়া বিকল্প ভাষা বেছে না নেয়, তাহলে হিন্দিই হবে তৃতীয় ভাষা।
এরপরেই দেবেন্দ্র ফড়নবিশ সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাস্তায় নামে মারাঠি সংগঠনগুলি। প্রতিবাদ বাড়তেই তা রাজনৈতিক সংঘাতে পরিণত হয় শাসক মহাজ্যোতি জোট ও বিরোধীদের মধ্যে।এরমধ্যেই মারাঠি ভাষার নামে পুণে ও মুম্বইয়ে হিংসার অভিযোগ উঠেছে। রাজ ঠাকরের এমএনএস-এর কর্মীরা এক দোকানদারকে মারধর করেন মারাঠি না বলার জন্য। অন্যদিকে, এক মোবাইল দোকানে ঢুকে কর্মচারীদের সপাটে চড় মারার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যার সূত্র উদ্ধব ঠাকরের দলের সাংসদের অফিস বলে দাবি। অভিযুক্ত ৭ জনকে এই ঘটনায় কয়েক ঘণ্টার পুলিশি জেরা শেষে সবাকে জামিন দোয়া হয়।
আরও পড়ুন-'দুধের সঙ্গে থুতু মিশিয়ে বিক্রি', আটক বিক্রেতা, জেহাদ দেখছে হিন্দু মহাসভা!
এদিকে, মহারাষ্ট্রে এনডিএ-র জোট সরকার চাপে পড়েছে। একদিকে কেন্দ্রের হিন্দি-প্রচেষ্টার সঙ্গে তাল মেলাতে হচ্ছে, অন্যদিকে ভোটের বছরে মারাঠি-ভাষাভাষী ভোটারদের মন জয় করাও বড় চ্যালেঞ্জ।মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ ইতিমধ্যেই রাজ ঠাকরের দলের দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, 'মারাঠি ভাষার মর্যাদা বজায় রাখতে হবে এই রাজ্যে।