বাংলাদেশ-নেপালের পুনরাবৃত্তি এবার সুদূর পূর্ব আফ্রিকায়। বিদ্যুৎ ও জল সংকট নিয়ে টানা বিক্ষোভ চলছিল মাদাগাস্কারে। তার জেরে অন্তত ২২ জন নিহত হয়েছেন। এই ঘটনার পর মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি বাজোয়েলিনা তার সরকার ভেঙে দিয়েছেন। রাষ্ট্রসংঘের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই প্রবল হিংসার কারণে আহত হয়েছেন অন্তত শতাধিক মানুষ।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর মাদাগাস্কারে জেন জি আন্দোলন শুরু হয়। সেই আন্দোলনের আঁচে এখনও পুড়ছে সে দেশ। সোমবারও চলেছে বিক্ষোভ। রাজধানী আন্তানানারিভোর তরুণদের নেতৃত্বে বিক্ষোভকারীরা জীবনযাত্রার ক্রমাবনতি, ঘন ঘন লোডশেডিং ও জল সংকটের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামে। স্থানীয় টেলিভিশন ফুটেজে দেখা গিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে গাইতে শহরের কেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা। বাধ্য হয়ে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে। বিভিন্ন সুপারমার্কেট, ইলেকট্রনিকসের দোকান ও ব্যাঙ্কে লুটপাট হয়েছে। এর পাশাপাশি কয়েকজন রাজটীতিবিদের বাড়িতেও হামলা হয়েছে। টেলিভিশনে এক বক্তৃতা দিতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনা সরকারের ব্যর্থতার জন্য কমা চেয়ে নিয়ে বলেন, সরকারের সদস্যরা যদি যথাযথ দায়িত্ব পালন না করেন তবে আমরা তার জন্য ক্ষমা চাইছি। আমি জনরোষ বুঝতে পারছি। বিদ্যুৎ ও জলের সমস্যায় মানুষের ভোগান্তির বিষয়টিও যুঝতে পারছি।' তিনি সমস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলিকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন। পাশাপাশি তরুণদের সঙ্গে আলোচনার জন্য আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন-'ভারত ইসলামিক দেশ...,' তরুণী ট্রাম্প সমর্থককে তুলোধোনা জনপ্রিয় সাংবাদিকের
সোমবার হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে আসলে প্রেসিডেন্ট জানান, তিনি প্রধানমন্ত্রীকে পদচ্যুত করেছেন ও সরকার ভেঙে দিয়েছেন। আগামী তিনদিনের মধ্যে নতুন প্রধানমন্ত্রীর জন্য আবেদন গ্রহণ করা হবে। এরপর নতুন সরকার গঠন করা হবে। রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক নিরাপত্তা বাহিনীর ‘অপ্রয়োজনীয় শক্তি প্রয়োগের’ নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, অন্তত ২২ জন নিহত এবং ১০০ জন আহত হন। তিনি জানান, আটক ও মারধরের পাশাপাশি বিক্ষোভকারীদের ওপর রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস এমনকী সরাসরি গুলিও চালানো হয়েছে।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২৩ সালে তৃতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনার এই আন্দোলন সবচেয়ে গুরুতর চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।জনমানসে সরকারের প্রতি যে অসন্তোষ জমা ছিল, তা এই আন্দোলনের মাধ্যমে বিস্ফোরিত হয়েছে।
আরও পড়ুন-'ভারত ইসলামিক দেশ...,' তরুণী ট্রাম্প সমর্থককে তুলোধোনা জনপ্রিয় সাংবাদিকের
উল্লেখ্য, ১৯৬০ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে মাদাগাস্কার একাধিক বিদ্রোহের কবলে পড়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ২০০৯-এ গণবিক্ষোভ যা প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মার্ক রাভালোমানানাকে পদত্যাগ। এরপর ক্ষমতায় আসেন রাজোয়েলিনা।