বাংলায় শারদীয় দুর্গাপুজোর রীতি শ্রীচৈতন্যের লীলাকাণ্ডের আগে থেকে প্রচলিত। প্রায় পাঁচশো বছরেরও বেশি সময় ধরে পুজোর এই রীতি। তেমনই প্রায় ৫০০ বছর ধরে প্রচলিত ঝাড়গ্রাম জেলার চিল্কিগড়ে অবস্থিত কনকদুর্গার পুজো। এই মন্দিরটি বাংলার একটি অত্যন্ত প্রাচীন ও ঐতিহাসিক স্থান। ডুলুং নদীর তীরে গভীর জঙ্গলের মধ্যে অবস্থিত এই মন্দির।
ইতিহাস ও কিংবদন্তী
স্থানীয় জনশ্রুতি অনুযায়ী, প্রায় ৫০০ বছর আগে চিল্কিগড়ের সামন্ত রাজা গোপীনাথ সিংহ মত্তগজ স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই মন্দিরটি নির্মাণ করেন। স্বপ্নাদেশ পাওয়ার পর রাজা তার রানীর হাতের সোনার কাঁকন দিয়ে দেবী দুর্গার মূর্তি তৈরি করান। এই কারণে দেবীর নামকরণ করা হয় 'কনকদুর্গা'।
আরও পড়ুন - বোধন ছাড়াও ষষ্ঠীতে পালিত হয় আরও ৩ নিয়ম! এগুলি পালন না করলে অসম্পূর্ণ থাকে পুজো
মূর্তি চুরির কাহিনি
১৯৬০ সালে আসল সোনার মূর্তিটি চুরি হয়ে যায়। এরপর গোপীনাথের বংশধররা অষ্টধাতুর একটি নতুন মূর্তি মন্দিরে স্থাপন করেন, যা বর্তমানে পূজিত হয়। এই মূর্তিটি অশ্বারোহিণী চতুর্ভূজা রূপে নির্মিত।
দেবীই স্বয়ং রান্না করেন ভোগ
শোনা যায়, দুর্গাপুজোর সময় নরবলির প্রচলন ছিল। পরে মহিষ ও পাঁঠা বলিই এই পুজোর অন্যতম রীতি হয়ে ওঠে। স্থানীয়দের বিশ্বাস অনুযায়ী, অষ্টমীর রাতে দেবী স্বয়ং ভোগ রান্না করেন। বর্তমান মন্দিরটি নতুন করে তৈরি করা হলেও, এর পাশেই প্রাচীন ও ভগ্নপ্রায় মন্দিরটির ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাওয়া যায়, যা ইতিহাসের সাক্ষী। মন্দিরটি কনক অরণ্যের মধ্যে অবস্থিত, যা একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। ডুলুং নদীর পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া পর্যটকদের জন্য একটি বিশেষ আকর্ষণ।
আরও পড়ুন - পকেট ভারী থাকবে গোটা পুজোয়! দেবীপক্ষের গোড়াতেই মায়ের কৃপা পাচ্ছে ৪ রাশি
কীভাবে যাবেন এই মন্দিরে?
মন্দিরটি ঝাড়গ্রাম শহর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ঝাড়গ্রাম থেকে সড়কপথে সহজেই অটো বা গাড়িতে করে এখানে পৌঁছানো যায়। এটি পর্যটকদের কাছে একটি জনপ্রিয় গন্তব্য। মন্দির চত্বরে একটি শিশু উদ্যান এবং কৃত্রিম লেকে নৌকা চালানোরও ব্যবস্থা রয়েছে, যা এটিকে একটি পারিবারিক ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত স্থান করে তোলে। তবে এই অঞ্চলে প্রচুর হনুমান থাকায় সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।