থাইল্যান্ডে ভালো চাকরির প্রলোভনে মায়ানমারে নিয়ে গিয়ে জোর করে কল সেন্টারে নিয়োগ করা হয়েছিল তাঁদের। কিন্তু বাস্তবে কাজ ছিল সাইবার প্রতারণা চালানোর জন্য। দিনের পর দিন এই প্রতারকদের হাতে বন্দি থাকার পর অবশেষে মুক্তি পেলেন বিহারের ৬ যুবক।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ভুয়ো চাকরির জাল ছড়িয়ে রয়েছে ৷ বিদেশের মাটিতে এই সমস্ত বেআইনি চাকরির টোপ পেয়ে পাড়ি দেন ভারতীয়রা ৷ দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে চলেছে এই চক্র ৷ ভুয়ো চাকরির এই জাল ছড়িয়ে রয়েছে মায়ানমার এবং থাইল্যান্ডেও৷চাকরির নামে পরবর্তী সময়ে এই ব্যক্তিরা সাইবার অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন ৷ জানা গেছে, থাইল্যান্ডে চাকরির টোপ দিয়ে ওই ৬ যুবককে মায়ানমারে পাচার করা হয়। তাদের মধ্যে একজন শচীন কুমার সিং (৩৯), কম্পিউটার সাইন্স ইঞ্জিনিয়ার এবং ইউটিউবার। মায়ানমারে তাঁর ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেছেন তিনি। শচীন জানান, 'আমি সকলকে এই ফাঁদে পা না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। ধর্মেন্দ্র চৌধুরী নামে এক নেপালের নাগরিক আমাকে থাইল্যান্ডে বার্ষিক ১২ লক্ষ টাকা বেতনের চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। গত ১৫ জানুয়ারি ধর্মেন্দ্র এবং জিতেন্দ্র চৌধুরী (উভয় নেপালি নাগরিক) কলকাতা হয়ে ব্যাঙ্কক এবং তারপর 'ওয়ার্ক ভিসা' নিয়ে মায়ানমারে আমার যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। তিন মাস পর, আমাকে কয়েক সশস্ত্র ব্যক্তি পণবন্দি করে। তারা দাবি করে, তাদের এজেন্টদের টাকা দেওয়া হয়েছে। তারা আমার মুক্তির জন্য ৫ লক্ষ টাকা দাবি করে। সেই সঙ্গে আমার কাছ থেকে পাসপোর্ট, ফোন কেড়ে নেয় এবং আমাকে একটি অন্ধকার ঘরে আটকে রাখে।'
আরও পড়ুন-'নোবেল' আবদার রাখেননি! 'বন্ধু' মোদীর উপর গোঁসা, ভারতে কোয়াডে আসবেন না ট্রাম্প?
তিনি আরও জানান, 'আমি যখন তাদের দাবি মেনে নিতে অস্বীকার করি, তখন তারা আমাকে বেধড়ক মারধর করে। শুধু তাই নয়, আমার পরিবারকে টাকা দিতে বাধ্য করে, এমনকী আমার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রি করার হুমকিও দেয়।' শচীনের কথায়, নিরামিষ খাবারের অভাবে তিনি চিনি এবং নুন-ভাত খেয়ে বেঁচে ছিলেন। এভাবে কয়েক মাস নির্যাতনের পর, অবশেষে তিনি পরিবারের কাছে ফিরে আসেন। এরপরেই তিনি পরামর্শ দিয়েছেন, 'বিদেশে চাকরিপ্রার্থীদের প্রতি আমার পরামর্শ, প্রথমে ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করুন, সংস্থাটি যাচাই করুন এবং তারপরেই সিদ্ধান্ত নিন।' অন্যদিকে, শচীনের মা মীনা দেবী দানাপুর থানায় ধর্মেন্দ্র, জিতেন্দ্র এবং সীতামারহির সুনীল কুমার রামের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছেন। তাঁর অভিযোগ, ধর্মেন্দ্র শচীনকে বিদেশে পাঠানোর জন্য ১.৫ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন। গত ২৫ মার্চের পর, সিহায় গ্রুপ অফ কোম্পানিজের কর্মীরা শচীনের উপর নির্যাতন শুরু করে। তার ফোন এবং পাসপোর্ট কেড়ে নেয় এবং ৩,০০০ মার্কিন ডলার দাবি করে।
অভিযোগ, পরিবারের তরফে সেই টাকা দেওয়া হলেও ২৫ এপ্রিল, শচীনকে অন্য একটি কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। গত ১৫ জুন, শচীন তাঁর পরিবারের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন।ইতিমধ্যে দানাপুর পুলিশ অভিযুক্ত সুনীল কুমার রামকে গ্রেফতার করেছে। তাকে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। ভারতীয় দূতাবাস, বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গে সমন্বয়ে সিটি এসপি (পশ্চিম) ভানু প্রতাপ সিং এই মামলাটি পর্যবেক্ষণ করছেন।এসপি বলেন, 'জুলাই মাসে, আমাদের জানানো হয়েছিল যে শচীনকে মায়ানমারের একটি সাইবার স্ক্যাম সেন্টার থেকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং সে দেশের সেনাবাহিনীর হেফাজতে রাখা হয়েছে। এরপর ২৭ আগস্ট, নয়া দিল্লিতে আসেন শচীন। তাঁকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।'
আরও পড়ুন-'নোবেল' আবদার রাখেননি! 'বন্ধু' মোদীর উপর গোঁসা, ভারতে কোয়াডে আসবেন না ট্রাম্প?
উল্লেখ্য, এই সমস্ত সাইবার অপরাধ মূলত মায়ানমার-থাইল্যান্ড সীমান্তবর্তী এলাকাগুলি থেকে পরিচালনা করা হয় ৷ শুধু তাই নয়, সুন্দর ভবিষ্যতের আশায় বিদেশে যাওয়া ভারতীয়রা একটা সময় পর বিভিন্ন প্রতারণামূলক অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন ৷এর আগেও কেন্দ্র সরকারের তরফে এই ধরনের চক্র সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছিল ৷