গত দুই দশক ধরে, সিনেমাটোগ্রাফার সুদীপ চট্টপাধ্যায় জনপ্রিয় ছবি সিনেমাটোগ্রাফি করেছেন। ‘বাজিরাও মাস্তানি’ (এই ছবির জন্য তিনি জাতীয় পুরষ্কার জিতেছিলেন) থেকে শুরু করে সঞ্জয় লীলা বানসালীর নানা ছবিতে কাজ করেছেন তিনি। এক সাক্ষাৎকারে খ্যাতিমান চিত্রগ্রাহক তাঁর সৃজনশীল পছন্দ, কলকাতার বাঙালি পরিবারে বেড়ে ওঠা, ‘ধুম ৩’ নিয়ে তাঁর আক্ষেপ সম্পর্কে নানা কথা ভাগ করে নিয়েছেন।
প্রত্যেকটি ছবিতে কাজ শুরু করার আগে কীভাবে প্রস্তুতি নেন সে বিষয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘চিত্রনাট্য পড়ার আগে আমি প্রথম ছবিটির কথা ভাবি। পরিচালকের কথা মন দিয়ে বোঝার চেষ্টা করি। বুঝতে চেষ্টা করি তিনি ঠিক কীভাবে দেখতে চাইছেন ছবিটা। এরপর পরবর্তী ধাপে থাকে চিত্রনাট্য পড়া। এখানেই আমি প্রায় সিনেমাটা নিজের মনের মধ্যে দেখে ফেলি। আমি কী ভাবছি তা পরিচালকের সঙ্গে ভাগ করে নিই এবং তারপরে আমরা যৌথ ভাবে রূপদানের কাজটা করি।'
আরও পড়ুন: 'এটা আমাদের বাড়ির ঐতিহ্য নয়…' ভাইজি অঞ্জিনীর ছবির প্রিমিয়ারে কেন এমন বললেন বরুণ?
তিনি কলকাতার ছেলে, সেখানেই ওঁর বেড়ে ওঠা। তাই এই শহর কি ওঁর সিনেমাটোগ্রাফিতে প্রভাব ফেলে? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি কলকাতায় বড় হয়েছি। আমার বাবা একজন সরকারী চাকুরীজীবী ছিলেন বটে, তবে তিনি ‘চেতনা’ নামে একটি থিয়েটার গ্রুপেরও অংশও ছিলেন। অভিনেতা হিসেবে নয়, তিনি সেই দলের পরিচালনায় থাকতেন। পরিচালক অরুণ মুখোপাধ্যায় তাঁর খুব প্রিয় বন্ধু ছিলেন। আমি থিয়েটার দেখে বড় হয়েছি। আমাদের টেলিভিশন ছিল না, তাই আমাদেরও প্রচুর বই ছিল এবং আমরা লাইব্রেরির সদস্য ছিলাম, তাছাড়া দাদু-দিদারা আমাদের গল্প বলতেন সেখান থেকে আমাদের কল্পনা শক্তি আরও বাড়ে। গল্পের প্রতি আমার প্রচণ্ড আকর্ষণ ছিল। সেটাই আমার ভিত তৈরি করেছিল।’
আরও পড়ুন: ইমার্জেন্সির মুক্তি জটের মাঝেই মুম্বইয়ের বাড়ি বেচলেন কঙ্গনা, টাকার দরকার BJP সাংসদের?
তবে নিজের সেই ভালোলাগাকে তাঁর চিনতে সময় লেগেছিল। তাই শখে ফটোগ্রাফি করলেও ইঞ্জিনিয়ারিং করার জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হন। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম। আমি যে খুব খারাপ ইঞ্জিনিয়ার হব, তা বুঝতে আমার প্রায় ৭-৮ মাস সময় লেগেছিল। তবে তা বোঝার পরি আমি সেখান থেকে পালিয়ে গিয়েছিলাম। আমাদের যৌথ পরিবার সেখানে সবাইকে রাজি করানো বিরাট ব্যাপার, তাই বাবার অফিসে গিয়ে তাঁকে আমার ছবি তোলার আগ্রহের বিষয়টা জানাই। আর সে দিকে যাতে তিনি আমাকে এগোতে দেন তার জন্য ওঁকে রাজি করাই।’
তবে সুদীপ চট্টপাধ্যায়ের ‘ধুম ৩’ নিয়ে আক্ষেপের শেষ নেই। তিনি বলেন, ‘ধুম ৩’ একটি বড় বাজেটের ছবি ছিল। তবে সিনেমার ন্যারেটিভ নিয়ে আমার কিছু প্রশ্ন ছিল, যা আমাকে অস্থির করে তুলতো। কিন্তু তা বলাতে, আমাকে বলা হয়েছিল যে, এখানে এইসব গুরুত্বপূর্ণ নয় কারণ এটা ‘ধুম’ এখানে দর্শক যুক্তি দেখে না। যখন ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল তখন খুব ভালো ব্যবসা করেছিল ঠিকই। তবে আমি হতাশ হয়েছিলাম যে ছবিটি মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছিল দর্শকদের থেকে। তার উপর আমি এই ছবির জন্য ‘রাম লীলা’ ছেড়েছিলাম।'
এরপর তিনি কলকাতায় সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কীভাবে কাজ করলেন সেই কথাও ভাগ করে নেন। তিনি বলেন, ‘আমি কলকাতায় গিয়েছিলাম। তারপর সৃজিত এসেছিলেন আমার কাছে ওঁর ছবি 'চতুষ্কোণ' নিয়ে। আমি চেয়েছিলাম তিনি আমাকে আরও কিছু বলবেন কারণ আমার স্ক্রিপ্টটা বেশ পছন্দ হয়েছিল। কিন্তু সৃজিত আমাকে বললেন, ‘তুমি এটা করবে না বলে কি লাভ!’ আমি ওঁকে বলি, ‘না আমি হয়তো সত্যি কাজটা করতে পারতাম না! নীরজ পান্ডের ‘বেবি’ এবং সঞ্জয়ের ‘বাজিরাও মাস্তানি’-এর প্রস্তুতি চলছে। তবে আমি সঞ্জয়ের সঙ্গে কথা বলতে পারি। যাইহোক, তারপর আমি এই ছবির কাজ করি। আমি যদিও সঠিকভাবে মনে নেই, তবে 'চতুষ্কোণ'-এর শুটিং করতে আমাদের প্রায় ২০-২২ দিন সময় লেগেছিল।'