বাঙালির জীবনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গুরুত্ব যে কতটা তা আর নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। ২৫শে বৈশাখে পাড়ায় পাড়ায় তাঁর জন্মবার্ষিকীর যে উদযাপন তা আজও প্রমাণ দেয় রবিঠাকুর বাঙালির ঠিক কতটা মন জুড়ে আছেন। আর তাই 'রবীন্দ্র কাব্য রহস্য'-এর নির্মাতাদের বুদ্ধিমত্তার প্রশংসা না করে পারা যায় না। তবে রবীন্দ্রনাথ যেমন একদিকে বাঙালির আবেগ, তেমন আর এক দিকে তাঁকে নিয়ে বিতর্কেরও শেষ নেই। নোবেল পুরস্কার পাওয়া হোক বা জাতীয় সঙ্গীতের উৎসই সবটা নিয়েই হয়েছে বিস্তর চর্চা। আর রবি ঠাকুরের সেই পক্ষ-বিপক্ষই অর্থাৎ প্রো ও অ্যান্টি যেন এই ছবির প্রাণ।
কেমন হল ‘রবীন্দ্র কাব্য রহস্য'?
সায়ন্তন ঘোষাল পরিচালিত ‘রবীন্দ্র কাব্য রহস্য’-এ দুটি টাইমলাইনকে দেখানো হয়েছে একটি ১৯১২-র লন্ডন আর একটি ২০২১-এর লন্ডন এবং কলকাতা। ছবির গল্পের পরতে পরতে জড়িয়ে রহস্য, আর খুন। আর এই খুনের সঙ্গেই মিলেমশে একাকার রবীন্দ্র প্রসঙ্গ। ভাবছেন কীভাবে? কবিতা দিয়ে। আর একটু খোলসা করে বলা যাক। ছবিতে এক একটি মৃতদেহের পাশে উঠে এসেছে রবীন্দ্রনাথের কবিতার ক্লু। তবে তার প্রেক্ষাপট কখনও লন্ডন তো কলকাতা। আর এই আবহেই আগমন ঘটে অভীক সেনের। অভীকের সাহায্য নেয় কলকাতা পুলিশ। এরপর খুনের উৎস সন্ধানে অভীক পাড়ি দেয় লন্ডন। আর সেখানেই পরিচয় হয় রবীন্দ্র-সাহিত্য বিশেষজ্ঞ বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায় ও রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী হিয়া সেন এবং সাংবাদিক শালিনী সেনগুপ্ত সঙ্গে আলাপ হয়। এরপর অভীকের কীভাবে সেই কবিতার অন্তরাল থেকে জটিল ধাঁধার সমাধান করেন আর সেখানে রবিঠাকুর কীভাবে মিশে যান সেই গল্প জানতে গেলে দেখতে হবে 'রবীন্দ্র কাব্য রহস্য।'
অভিনয় কেমন লাগল?
অভীকে সেনের চরিত্রে ঋত্বিক চক্রবর্তী দারুণ ভাবে মানান সই। তিনি দারুন বিশ্বাসযোগ্য ভাবে চরিত্রটিকে পর্দায় প্রাণ দিয়েছেন। তবে তাঁর মতো অভিনেতার থেকে দর্শকদের প্রত্যাশাও এমনই থাকে। সেই দিক থেকে দেখতে গেলে ঋত্বিক যথাযথ ভাবে সেই প্রত্যাশা পূরণ করেছেন। 'হিয়া' চরিত্রে শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় সাবলীল। বাকিরাও নিজেদের জায়গায় ঠিকঠাক। তবে আরও বিশ্বাসযোগ্য হতে পারত। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের ভূমিকায় প্রিয়াংশু চট্টোপাধ্যায় দর্শকদের জন্য বিরাট চমক। এককথায় তিনি অনবদ্য। তাঁর অভিনয় আলাদা করে প্রশংসার দাবি রাখে।
ওভারঅল কেমন লাগল?
শুরুতেই বলতে হয় ছবির ভাবনা। তা যে একেবারেই মৌলিক তা বলাই বাহুল্য। এরকম একটা বিষয়কে, বিশেষ করে রবিঠাকুরকে যে রহস্যের মোড়কে যে এই ভাবে তুলে ধরা যায় তার জন্য ছবির নির্মাতারা বিশেষ প্রশংসার দাবি রাখেন। ছবির পরিচালক সায়ন্তন ঘোষাল যথাযথ ভাবেই রহস্যের আবহ ধরে রেখেছিলেন। তাছাড়া লুক অ্যান্ড ফিল সেটাও বেশ ভালো ছিল। এরপর আসতেই হয় প্রিয়াংশুর মেকআপ সেটা যে এক কথায় দারুণ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। শুধু তিনি নন ছবির প্রতিটি অভিনেতাকে দেখতে বেশ ভালো লেগেছে। ছবির গল্প বেশ ভালো। তবে প্রথমার্ধের গতি বেশ ধীর। তবে চিত্রনাট্য আরও মজবুত হতে পারত। আরও জমাটি থ্রিলার পেতে পারতেন দর্শকরা। কিন্তু পরিচালক যেভাবে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব, বাস্তব ও ফিকশনকে মিশিয়ে দিয়েছেন তা অনবদ্য। তা বাস্তব আর অবাস্তবের সীমারেখাকে গুলিয়ে দেয়, আর এটাই ছবিকে প্রাসঙ্গিক করে তোলে।