এই পুজোয় দীর্ঘ ১২ বছর পর আবারও একবার বাংলার বক্স অফিসে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ফিরছেন ‘প্রবীর রায় চৌধুরী’ হয়ে, সৌজন্যে সৃজিতের 'দশম অবতার'। তার আগে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে খোলামেলা আড্ডায় ‘স্বয়ং ইন্ডাস্ট্রি’ প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। তিনি যদিও নিজেকে ইন্ডাস্ট্রির 'জ্যেষ্ঠপুত্র'-এর তকমা দিলেন।
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়
কখনও তিনি ‘অটোগ্রাফ’-এর ‘অরুণ চ্যাটার্জি’, কখনও আবার 'শেষপাতা'র ‘বাল্মিকী’, এই প্রসেনজিৎই আবার বলিউডে গিয়ে ধরা দিয়েছেন ‘জুবিলি’র 'স্টার মেকার' গ্ল্যামারাস 'শ্রীকান্ত রায়' হয়ে। সব চরিত্রেই তিনি চমৎকার, 'জাদু' করেছেন বললে ভুল হয় না। এই পুজোয় বাংলার বক্স অফিসে প্রসেনজিৎ ফিরছেন ২০১১-এর জনপ্রিয় চরিত্র ‘প্রবীর রায় চৌধুরী’ হয়ে। তার আগে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে খোলামেলা আড্ডা দিলেন ‘স্বয়ং ইন্ডাস্ট্রি’ প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। যদিও তিনি নিজেকে ইন্ডাস্ট্রির 'জ্যেষ্ঠপুত্র' বলেই ব্যাখ্যা দিলেন।
২২ শ্রাবণ মুক্তি পেয়েছিল ২০১১, এটা ২০২৩, ১২ বছর কেটে গিয়েছে, আর এই ছবিতে ২০ বছর আগের প্রবীর রায় চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?
প্রসেনজিৎ: এই প্রশ্নটা অনেকের মনেই আসছে। ২২ শ্রাবণ-এ প্রবীর রায় চৌধুরী মারা গিয়েছেন। সেই লোকটা কীভাবে ফিরবেন! হিসেব করলে ১৩ বছর, তবে আসলে প্রায় ২০ বছর আগের ঘটনা এটা। তাই প্রবীর রায় চৌধুরী কীভাবে ফিরবেন, এটা সকলের প্রশ্ন। ট্রেলার দেখে তার কিছুটা উত্তর হয়ত অনেকে পেয়েছেন। তবে একজন অভিনেতা হিসাবে এটা আমার কাছে চ্যালেঞ্জিং তো বটেই।
প্রবীর রায় চৌধুরী হিসাবে নিজেকে কীভাবে প্রস্তুত করলেন?
প্রসেনজিৎ: সে অর্থে এই বছরটা (২০২৩) তো আমার অদ্ভুতভাবে যাচ্ছে। ‘কাবেরী অন্তর্ধান’, ‘জুবিলি’, ‘স্কুপ’, তারপর ‘বাল্মিকী’র (ছবি-শেষ পাতা) মতো চরিত্র। তারপর আবার এই ‘প্রবীর রায় চৌধুরী’। কোনওটার সঙ্গেই কোনওটার মিল নেই। তবে আমি অভিনেতা হিসাবে প্রত্যেক ছবির আগে ৩-৪ মাসের একটা বিরতি নিই। সেই সময়টাতে নিজেকে প্রস্তুত করি। তখন মিডিয়ার সামনেও আসি না। আর দশম অবতারের জন্য যখন এই অফিসে (এসভিএফ) তিন-চার মাস পর ফিরলাম লুক টেস্টের জন্য, তখন সকলে আমায় দাঁড়িয়ে অভিবাদন করেছিল। সেটা কেন, ছবিটা দেখলেই বোঝা যাবে।
'২২ শ্রাবণ' থেকে 'দশম অবতার', এই দুই প্রবীর রায় চৌধুরীর মধ্যে পার্থক্য কোথায়?
প্রসেনজিৎ: ২২ শ্রাবণে যে প্রবীর রায় চৌধুরীকে মানুষ দেখেছেন, সেই প্রবীরের জীবনের প্রতি কোনও মোহ নেই। সে বাড়িতে বসে থাকে, ফ্রাস্ট্রেটেড, মদ খায়। আর দশম অবতারের প্রবীর রায় চৌধুরী কিন্তু ভীষণ অ্যাক্টিভ। তাই দুই প্রবীরের চেহারা কখনওই এক হতে পারে না। তার সঙ্গে এই যে পুলিশ অফিসার ‘পোদ্দার’-এর যে চরিত্রটি রয়েছে ওই অভিনেতার (অনির্বাণ ভট্টাচার্য) বয়স আমার অর্ধেক। ছবিতে তার সমসাময়িক না হলেও দাদা-ভাই-এর একটা সম্পর্ক রয়েছেই, সবমিলিয়ে আগের প্রবীর রায় চৌধুরীতে ফেরাটা চ্যালেঞ্জিং তো বটেই। এখন সকলেই জেনেই গিয়েছেন, এই লোকটা যখন কোনও চরিত্র করে, তখন নিজেকে প্রচণ্ড ভাঙাচোরা করে।
প্রসেনজিৎ: (মাথার চুলে হাত বোলাতে বোলাতে, হালকা হেসে) শাহরুখকে নিয়ে একটাই কথা বলব, ও ইন্সপিরশেন (অনুপ্রেরণা)। শুধু আমাদের কাছে নয়, পরের প্রজন্মের কাছেও অনুপ্রেরণা। ‘শাহরুখ ইজ ব্যাক’ কথাটাই ভুল। শাহরুখ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির প্রতি একটা বড় দায়িত্ব পালন করেছেন। উনি শুধু নিজে ফেরেননি, গোটা ইন্ডাস্ট্রিকে ফিরিয়ে এনেছেন। এটাকেই বলে দায়িত্ব। ‘শাহরুখ ব্র্যান্ড’-এর দায়িত্ব তো ওঁর রয়েছেই। শাহরুখ চিরকালই শাহরুখ-ই থাকবেন। তবে বড় কথা হল দায়িত্ব, যে উনি শুধু নিজেকে নয়, গোটা ইন্ডাস্ট্রিকে অক্সিজেন জোগাচ্ছেন। আর এঁর জন্যই আমি ওঁকে স্যালুট জানাতে চাই।
আর অমিতাভ বচ্চন যখন দশম অবতার-এর ট্রেলার টুইট করলেন কেমন অনুভূতি হয়েছিল?
প্রসেনজিৎ: দুজন মানুষকে আমি আমার ইন্সপিরশেন বলি। এক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অপরজন অমিতাভ বচ্চন। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আজ আর নেই, উনি যখন ছিলেন ওঁর কাছ থেকে সব সময়ই আশীর্বাদ নিয়েছি। আর অমিতাভ বচ্চন সেই ছোটবেলা থেকে আমাদের কাছে স্টার, সুপারস্টার, আইকন, যেটাই বলিনা কেন, এঁদের কাছে সত্যিই আশীর্বাদ নেওয়ার মতো। এই বয়সেও লোকটা নাতির বয়সী বরুণ ধাওয়ানের সঙ্গেও একই এনার্জিতে কাজ করে চলেছেন। এঁদের কাছে অনেক কিছু শেখার আছে। সারা জীবন এঁরা আমার অনুপ্রেরণা।এছাড়াও কমল স্যর (কমল হাসান)ও রয়েছেন।
'দশম অবতার'-এর জন্য ঐতিহ্যবাহী বাংলা মদের ঠেক বারদুয়ারী-তে গিয়ে শ্যুটিং করেছেন, সেই অভিজ্ঞতা কেমন ছিল…
প্রসেনজিৎ: সৃজিতের ছবির মধ্যে সবথেকে যেটা ভালো লাগে, সেটা হল ও আর কৌশিক এরাঁ বাঙালিয়ানাটাকে ফিরিয়ে আনেন। এটাতেও যেখানে যেখানে শ্যুট করেছি, সেটা বাঙালিদের কাছে একটা নস্টালজিক জায়গা। বারদুয়ারীতে একসময় বহু নামী ইন্টেলেকচুয়ালরা যেতেন। এর বহু ইতিহাস আছে। আর এই জায়গাগুলো একটা ছবিতে ব্যবহার করা সৃজিতের ক্রেডিট। ওখানে যখন সেই মানুষগুলোকে নিয়ে গল্প শুনছিলাম, সেগুলো নিয়েও আলাদা সিনেমা বানানো যায়।
প্রসেনজিৎ: নাহ, সেটা যাইনি, এবারই শ্যুটিংয়ের জন্য প্রথম গিয়েছিলাম। শ্যুটিংটাও খুব মজার ছিল। যখন আমি ঢুকি ওখানে শর্ট দিতে দিতে, তখন অনেকেই চিনতে পারেননি। পরে যখন বুঝলেন - আমি, সকলের প্রতিক্রিয়াটা দেখার মতো ছিল…।
বলিউডে আবার কোন ছবি বা সিরিজে দেখব?
প্রসেনজিৎ: এটা বলা যাবে না। মুম্বইতে কাজের একটা বিষয় আছে, প্রযোজনা সংস্থা যতক্ষণ না ঘোষণা করে, কিছুই বলা যায় না। তবে হ্যাঁ, 'জুবিলি', 'স্কুপ'-এর পর কিছু বড় কাজ তো করছি।
এই যে নির্দিষ্ট কোনও চরিত্র বা চরিত্রগুলি নিয়ে ছবি বানানোর যে ট্রেন্ড চলছে, সেটা থেকেই কি ‘দশম অবতার’ বানানো?
প্রসেনজিৎ: এটা আমার থেকেও ভালো সৃজিত বলতে পারবে। এটা ওঁর ভাবনা। তবে আমার মনে হয় এই ট্রেন্ডটা গোটা বিশ্বজুড়েই চলছে। একটা নয় একাধিক জনপ্রিয় চরিত্র মানুষের কাছে বিভিন্নভাবে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে, একজায়গায় আনা হচ্ছে। এই ট্রেন্ড এখানেও এসেছে। আমার মনে হয় কেনই বা হবে না! এটা খানিকটা পুরনো গান শোনার মতো।