বিজেপিতে যোগদানের পরই প্রযোজক সৌরভ পালোধির ‘ঘুম নেই’ নাটক থেকে বাদ পড়লেন অভিনেতা কৌশিক কর। মনেপ্রাণে বামপন্থায় বিশ্বাসী সৌরভ পালোধি। যেখানে অনেকেই সৌরভের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন, অনেকে আবার একে ‘অসহিষ্ণুতা’র কারণ বলেছেন। পালোধির মন্তব্য অনুযায়ী, ‘ঘুম নেই নাটক থেকে বাদ দেওয়া হল কৌশিক করকে। কারণ তিনি বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। আর বর্তমান সময়ে সেটাই বাদ দেওয়ার যথেষ্ট কারণ। মেহনতী মানুষের নাটকে সাম্প্রদায়িকদের ঠাঁই নেই। তাই, চল ফোট…’। ২০১৯ সালে পালোধির ‘ইচ্ছেমতো’ গ্রুপে ‘ঘুম নেই’ নাটকে একটি চরিত্রে অভিনয় করার জন্য কৌশিক করকে স্বাগত নেওয়া হয়েছিল! পালোধির কথায়, ‘দত্তের লেখা নাটক থেকে কৌশিক এবং আমি তাঁর চরিত্র তৈরি করে নাম রেখেছিলাম অখলাক। ২০১৫ সালে দাদরির ঘটনায় একদল মানুষ মহম্মদ আখলাকের বাড়িতে হামলা করেছিল, গোমাংস খাওয়ার সন্দেহে তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল। বিজেপিতে যোগদানের পর আখলাকের মতো চরিত্রে তাঁর অভিনয় মানে নাটকের আত্মাকে আক্রমণ করা।’ সেজন্য একটি মহল থেকে তাঁকে ‘অসহিষ্ণু’ বলা হলেও তাঁর কোনও আপত্তি নেই বলেই জানিয়েছেন পালোধি।যদিও আখলাকের চরিত্র নিয়ে কোনও প্রশংসা নিতে নারাজ কৌশিক কর। তিনি জানিয়েছেন, ‘এই ধরনের মন্তব্য করে সৌরভ তাঁর বোকামোকে ঢাকার চেষ্টা করছে। কিছু বামপন্থী থিয়েটারকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। মূল স্তরের সঙ্গে তাঁদের কোনও যোগাযোগ নেই। নাটক থেকে বাদ দেওয়া অথবা বাধা দেওয়া শুধুমাত্র তাঁদের নিরাপত্তাহীনতা প্রকাশ করে, কমিউনিজমের মর্ম তাঁরা বোঝেন না।’ তিনি আরও জানিয়েছেন, পুরো বিষয়টা থিয়েটার ‘পেশাদারদের অস্বচ্ছ মনোভাব’ এবং ‘ফ্যাসিবাদী বামপন্থা’-কে পরিস্কার করে।এই ঘটনায় যেমন বিস্মিত হয়েছেন অনেকে, তেমনি সমালোচনায় সরব হয়েছেন। পরিচালক দেবেশ চট্টোপাধ্যায়কে দেখা গিয়েছে ফেসবুকে পালোধিক সমর্থনে কথা বলতে। অন্যদিকে, পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় সেই কাজের বিরোধিতা করে বলেছেন, ‘রাজনৈতিক রঙের ওপর ভিত্তি করে কখনওই কাস্টিং করা উচিত নয়।’ অভিনেতা ঋদ্ধি সেন জানিয়েছেন, ‘সকলের আলাদা আলাদা পছন্দ।’অভিনেত্রী তথা বিজেপী নেত্রী কাঞ্চনা মৈত্র জানিয়েছেন, ‘এটা নিছক অসহিষ্ণুতা। গণতান্ত্রিক দেশে এই জাতীয় পদক্ষেপ মানা যায় না।’ অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ জানিয়েছেন, এটি বামপন্থী থিয়েটার কর্মীদের ‘ভণ্ডামি’ এবং ‘ফ্যাসিবাদ’-কে প্রকাশিত করছে। তিনি আরেও বলেন, ‘হতাশা তাঁদের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। তাই এই ঘুম নেইটা তাঁদের জন্যই’।সম্প্রতি, গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল ‘নান্দীকার’ থেকে কেউ বিজেপিতে যোগদান করেছে। এই সম্পর্কে রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত হতাশা প্রকাশ করেছেন। অভিনেত্রী সোহিনী সেনগুপ্ত বলেছেন, ‘পরে তিনি গ্রুপের সদস্যদের বলেছেন আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক মতভেদ থাকতেই পারে কিন্তু সেটা আমাদের শিল্পের উপর প্রভাব ফেলবে না’। তিনি আরও বলেন, 'নান্দীকার কখনও কোনও ব্যক্তিকে তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শের জন্য বহিষ্কার করবে না।'