শাহিদ আফ্রিদিকে 'বুম-বুম' ডাকনাম দেওয়া হয়েছিল একটা বিশেষ কারণে। পাকিস্তানের অন্যতম সেরা আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান শাহিদ আফ্রিদি এক সময় ওয়ানডে ক্রিকেটে সবচেয়ে দ্রুত সেঞ্চুরির রেকর্ডের মালিক ছিলেন। ১৯৯৬ সালে নাইরোবিতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে মাত্র ৩৭ বলে শতক হাঁকিয়েছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন তার এই রেকর্ড অক্ষুণ্ণ ছিল, তবে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ডের অলরাউন্ডার কোরি অ্যান্ডারসন ৩৬ বলে সেঞ্চুরি করে সেই রেকর্ড ভাঙেন। এরপর ২০১৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক এবি ডি'ভিলিয়ার্স মাত্র ৩১ বলে শতক করে নতুন রেকর্ড গড়েন।
যদিও আফ্রিদির চেয়ে দ্রুত সেঞ্চুরি এখন হয়েছে, তবে তার ঐতিহাসিক শতকের সঙ্গে সচিনের একটি বিশেষ গল্প জড়িয়ে রয়েছে। আফ্রিদি নিজেই একবার প্রকাশ করেছিলেন যে, ভারতীয় কিংবদন্তি সচিন তেন্ডুলকরের ব্যাট দিয়ে সেই ৩৭ বলে শতক করেছিলেন তিনি।
দেখুন ৩৭ বলে ODI শতরানের ভিডিয়ো-
সচিনের ব্যাট দিয়ে ৩৭ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন আফ্রিদি-
২০২১ সালে টিএনএন-এর এক ইউটিউব ভিডিয়োতে শাহিদ আফ্রিদি জানিয়েছিলেন, ‘আমি এখনও সেই ব্যাটটি সযত্নে সংরক্ষণ করে রেখেছি, যেটি দিয়ে আমি আমার প্রথম ইনিংস খেলেছিলাম। ব্যাটটি ইতিহাস তৈরি করেছিল। এটি ছিল সচিনের ব্যাট, যিনি আমার অন্যতম প্রিয় খেলোয়াড়। আমি এই ব্যাট দিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়েছি। আর এর জন্য ওয়াকার ইউনুসের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। কারণ তিনিই আমাকে ব্যাটটি দিয়েছিলেন ম্যাচের আগে অনুশীলনের সময়। তিনি বলেছিলেন, আমি যেন এই ব্যাট দিয়েই খেলি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই ব্যাটটি শাহিদ আফ্রিদিকে গড়ে তুলতে বড় ভূমিকা পালন করেছিল। এটি আমার জন্য খুবই বিশেষ। মাঝে মাঝে আমি আবারও এই ব্যাট দিয়ে খেলার চেষ্টা করেছি, কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত নিই এটি সংরক্ষণ করব।’
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫ সময়ে ফের এই প্রসঙ্গ উঠল-
সাম্প্রতিক চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫ সময়ে এক সাক্ষাৎকারে স্টার স্পোর্টস ইন্ডিয়া-তে শাহিদ আফ্রিদি এই বিষয়ে আবার বলেন। তিনি বলেন এই সময়ে সচিন তেন্ডুলকরের প্রতিক্রিয়া কী ছিল। এই সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে শাহিদ আফ্রিদি বলেন, ‘আমি সচিনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে আমি আপনার ব্যাট দিয়ে শতক করেছি, তখন তিনি বললেন, ‘আরে, আমি এই ব্যাট দিয়ে শূন্য রানেও আউট হয়েছি!’
আফ্রিদি জানান তিনি কীভাবে তিনি সচিনের ব্যাট পেয়েছিলেন-
শো-এর সঞ্চালক যখন আফ্রিদিকে জিজ্ঞেস করেন যে তিনি কীভাবে সচিনের ব্যাট পেলেন, তখন তিনি বলেন যে পাকিস্তানের হয়ে খেলার জন্য নির্বাচিত হওয়ার পর তাকে ভিকি ভাই একটি ব্যাট দেন এবং জানান যে এটি সচিন তেন্ডুলকরের ব্যাট। পরে আফ্রিদি জানতে পারেন, সচিন প্রথমে ব্যাটটি মঈন খানকে দিয়েছিলেন, আর মঈন সেই ব্যাটের আদলে সিয়ালকোটে একই ধরনের আরও ব্যাট বানিয়েছিলেন।
এরপরে আফ্রিদি বলেন, ‘আমার নাম পাকিস্তানের দলে আসে, তখন আমি জানতে পারি যে আমাকে ওপেন করতে হবে। তখন ভিকি ভাই আমাকে একটি ব্যাট দিলেন এবং বললেন, ‘এটা সচিনের ব্যাট।’ আমি বললাম, ‘আচ্ছা, এটা আমার প্রিয় খেলোয়াড়ের ব্যাট?’ পরে জানতে পারি, মঈন ভাইকে সচিন ব্যাটটি দিয়েছিলেন, আর মঈন ভাই সিয়ালকোটে একই ধরনের ব্যাট বানিয়েছিলেন। তখন আমি বিষয়টি বুঝতে পারি।’ আফ্রিদির এই গল্প শুনে পুরো প্যানেল হাসিতে মেতে ওঠে।
দেখুন সচিনের ব্যাট দিয়ে শতরান করার প্রসঙ্গে কী বললেন আফ্রিদি?
এই ঘটনা প্রসঙ্গে আজহার মাহমুদ কী বলছিলেন?
আফ্রিদির প্রাক্তন পাকিস্তানি সতীর্থ আজহার মাহমুদও সচিন তেন্ডুলকরের ব্যাটের সঙ্গে যুক্ত একটি মজার ঘটনা প্রকাশ করেছিলেন। আজহার মাহমুদ স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘তখন শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনার, সনৎ জয়সূর্য ও কালুিথারানা, ইনিংসের শুরুতেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতেন। তাই আমরা ভাবছিলাম, আমাদেরও এমন একজন দরকার, যে তিন নম্বরে নেমে আক্রমণ করতে পারবে। আফ্রিদি আর আমি নেটে প্র্যাকটিস করছিলাম। আমি খানিকটা বুঝেশুনে বড় শট খেলছিলাম, কিন্তু আফ্রিদি স্পিনারদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল, একের পর এক বল মাঠের বাইরে পাঠাতে লাগল।’
আরও পড়ুন… PAK vs NZ: শাহিন আফ্রিদি ও মহম্মদ রিজওয়ানের ঝামেলা! ম্যাচের মাঝেই দুই তারকার তর্ক, সামনে এল ভিডিয়ো
আজহার মাহমুদ আরও বলেন, ‘পরের দিন আমাদের ম্যাচ ছিল শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে, তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হল যে আফ্রিদি তিন নম্বরে ব্যাট করবে। মনে হয়, ওয়াকার ইউনুস সচিনের কাছ থেকে ব্যাটটি পেয়েছিলেন, আর সেই ব্যাট দিয়েই আফ্রিদি সেঞ্চুরি করল। এরপর থেকেই সে একজন ব্যাটসম্যান হয়ে উঠল। মূলত, সে ছিল একজন বোলার, যে বড় শট খেলতে পারত। তবে শেষ পর্যন্ত সে দারুণ এক কেরিয়ার গড়ে তোলে।’
ফের মুখোমুখি দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তান-
এদিকে, আফ্রিদি ও সচিনের প্রাক্তন দল পাকিস্তান ও ভারত বর্তমানে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫-এ নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স দেওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। পাকিস্তান ১৯ ফেব্রুয়ারি নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান শুরু করেছে, আর ভারত ২০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচ খেলবে। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তান ২৩ ফেব্রুয়ারি এক মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মুখোমুখি হবে, যা ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য এক বহু প্রতীক্ষিত লড়াই।