বৃষ্টিভেজা লালমাটির রূপ কি কলকাতার রাডারে ধরা সম্ভব? বা কোনও শহুরে রুটিনের ব্র্যাকেটে? পরপর দুটো প্রশ্নের উত্তর নিয়ে নানা মতামত থাকতে পারে। কিন্তু বর্ষায় অনেকের পছন্দের গন্তব্য লালমাটির দেশ। কংক্রিট অরণ্য থেকে কিছুটা দূরে, সভ্যতা যেখানে এখনও তার ‘অভিজাত’ স্পর্শ রাখেনি, তেমন কোনও স্থান। সম্প্রতি বোলপুুরের প্রান্তিকের কাছাকাছি এক স্থানে আয়োজিত হয়েছিল এমন এক ‘রিট্রিট’।
আরও পড়ুন - Barsha Shantiniketan: কলকাতার জল-জমা বুকে শান্তিনিকেতনি বর্ষার আমেজ, ‘ভেজার’ আমন্ত্রণ পাঠালেন আশ্রমিকরা
রিট্রিট মানে এমনিতে রোজকার জীবনযাপন থেকে ছুটি নিয়ে অন্য এক জগতে চলে যাওয়া, কয়েকদিনের জন্য। তবে এই রিট্রিটে ভ্রমণপ্রেমীরা ‘ছুটি’ নিয়েছিলেন ডিজিটাল দুনিয়া থেকেও। ভার্চুয়াল ‘বন্ধু’দের বদলে শুধু রক্তমাংসের মানুষদের সঙ্গে গোটা একদিন সময়যাপন। ইন্টারনেট দুর্লভ বলে ‘অফলাইন’ জগতের হারিয়ে যাওয়া নিখাদ বাঙালি আড্ডার কাছে ফিরে আসা। সঙ্গী ছিল রকমারি বাঙালি ও বিদেশি খাওয়াদাওয়া, গতানুগতিক ছক না-মানা সেসব রান্নায় চমৎকৃত হন সকলেই। বিকেলের দিকে মনোবিদের তত্ত্বাবধানে আয়োজিত হয় মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনার বিশেষ পর্ব।
আরও পড়ুন - HT Bangla Exclusive: বুড়ো হতে থাকা শহরকে বনস্পতির ছায়া দিচ্ছে অচেনা 'সন্তান'! বিষণ্ণ বিকেলে শরতের ছোঁয়া
স্বাধীনতা দিবসের পর ‘মোরাম দ্য আর্থ’-এর এই রিট্রিটে ঘুরতে গিয়েছিলেন দশ জনের একটি দল। কলকাতা থেকে যাওয়া ও কলকাতায় ফেরা পর্যন্ত সবরকম ব্যবস্থাপনা নিয়েই বেশ সন্তুষ্ট সদস্যরা। দলটির অন্যতম সদস্য সাধন চক্রবর্তীর কথায়, ‘আমি কাজের সূত্রে নানা জায়গায় ঘুরে বেড়াই প্রতি মাসে। তবে এই রিট্রিট সত্যিই অন্যরকম, বেশ ভালো লেগেছে। আমার বিশ্বাস, অন্যদেরও পছন্দ হয়েছে।’ অধ্যাপিকা ইন্দ্রাণী চক্রবর্তী বলেন, ‘খুব ভালো অভিজ্ঞতা। আমি ভাবতেই পারি না, সিনিয়র সিটিজেনদের দায়িত্ব এভাবে কেউ নিতে পারে। সত্যিই এই উদ্যোগ খুব ভালো।’ অশীতিপর বাণী চৌধুরী বয়সের ভারে বেশ আক্রান্ত। তবুও স্নাত গাছগাছালির স্নিগ্ধ ঘেরাটোপ মুগ্ধ করেছে তাঁকে। ফের এমন রিট্রিটে আসার ইচ্ছে প্রকাশ করলেন তিনি। ইচ্ছে প্রকাশ করলেন অন্যরাও। ডিজিটালের দাসত্ব ও এআই-আতঙ্কে তোলপাড় বিশ্বের বিপ্রতীপে থাকা যে জগত শান্ত-সমাহিত, প্রকারান্তরে যেন তার কাছে ধরা দিতে চাইলেন ভ্রমণপিপাসুরা, বারবার।