ভিনরাজ্যে বাঙালি পরিচয়কে কেন্দ্র করে ফের মর্মান্তিক ঘটনা। মহারাষ্ট্রে ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে গ্রেফতার, জেলে অমানবিক অত্যাচার সব কিছুর পর অবশেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ার বাসিন্দা গোলাম মণ্ডল। সোমবার সকালে নিজের বাড়িতেই তাঁর মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন: তামিলনাড়ুতে পরিযায়ী শ্রমিকের দেহ সৎকারে বাধা, এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ফিরল টাকিতে
হাবড়ার বাসিন্দা গোলাম মণ্ডল জীবিকার তাগিদে গিয়েছিলেন মুম্বই। সেখানেই দিনমজুর হিসেবে কাজ করতেন। অভিযোগ, বাংলায় কথা বলার অপরাধেই তাঁকে ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে আটক করে পুলিশ। পরে জেলে পাঠানো হয়। গোলামের পরিবারের দাবি, জেল হেফাজতে দিনের পর দিন তাঁকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মুখে পড়তে হয়। পরিযায়ী শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘দেশ বাঁচাও গণমঞ্চ’-এর হস্তক্ষেপে জেল থেকে মুক্তি পান গোলাম মণ্ডল।
তবে মুক্তির পরও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি তিনি। অভিযোগ, বম্বে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের একটি খালি অফিসে তাঁকে আটকে রাখা হয়েছিল বেশ কিছুদিন। সেখানে খাবারের নামে দেওয়া হতো সামান্য ভাত, অনেক সময় শুধু জল খেয়ে দিন কাটাতে বাধ্য হতেন তিনি। আতঙ্ক ও দুঃসহ অভিজ্ঞতার ধাক্কায় খাওয়াদাওয়া প্রায় ছেড়ে দিয়েছিলেন গোলাম। গণমঞ্চের সহযোগিতায় সাংবাদিক বৈঠক করে নিজের দুর্দশার কথা প্রকাশ করেছিলেন গোলাম মণ্ডল। তারপর হাবড়ায় বাড়ি ফিরে এসেও মানসিক যন্ত্রণা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসা চলছিল, কিন্তু রোববার তাঁর শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হয়। জানা যায়, সোমবার তাঁকে কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তর করার পরিকল্পনা হয়েছিল। তার আগেই ভোরে মৃত্যু হয় তাঁর।
গোলাম মণ্ডলের মৃত্যুর ঘটনায় ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের নেত্রী ও সাংসদ দোলা সেন জানান, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছিল। কিন্তু তার আগেই এই অঘটন ঘটে যায়। দুপুরে তৃণমূলের প্রতিনিধিদল তাঁর হাবড়ার বাড়িতে পৌঁছনোর কথা। বাঙালি পরিচয় নিয়ে ভিনরাজ্যে এভাবে হেনস্তা ও মৃত্যুর ঘটনা ফের একবার নিরাপত্তা ও মৌলিক অধিকারের প্রশ্ন তুলে দিল। বাংলার শ্রমিকরা প্রতিদিন হাজারে হাজারে পাড়ি দিচ্ছেন ভিনরাজ্যে রুজির টানে। সেখানে এভাবে হেনস্তা বা অত্যাচারের ঘটনা তাঁদের পরিবারগুলির মধ্যে আতঙ্ক বাড়াচ্ছে।