উত্তপ্ত হয়ে উঠল বিধানসভা অধিবেশন। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার সরগরম হয়ে ওঠে কক্ষ। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সেই মন্তব্যের বিরুদ্ধে সরব হতেই মুহূর্তে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিজেপি বিধায়করা একযোগে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভে সামিল হন। শেষপর্যন্ত শৃঙ্খলা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়ে বিরোধী দলনেতাকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পরপরই ওয়াকআউট করে বিধানসভা থেকে বেরিয়ে যান বিজেপি বিজেপি বিধায়করা।
আরও পড়ুন: মঞ্চ বিতর্কের আবহে এবার কলকাতার রাস্তায় সেনা বনাম পুলিশ! চরমে নাটক
ঘটনার সূত্রপাত ধর্মতলায়। সোমবার গান্ধীমূর্তির পাদদেশে তৃণমূলের আন্দোলনের জন্য নির্মিত মঞ্চ ভেঙে দেয় সেনা। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র সমালোচনা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, রাজনৈতিক চাপে পড়েই সেনাকে ব্যবহার করেছে বিজেপি। মঙ্গলবার বিধানসভায় সেই প্রসঙ্গ তোলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তিনি বলেন, যেভাবে গতকাল সেনা তৃণমূলের প্রতিবাদ মঞ্চ ভেঙে দিল, সেই দৃশ্য মনে করিয়ে দিচ্ছিল ১৯৭১ সালের মার্চের ঢাকা। তখন পাক সেনারা সাধারণ মানুষের উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিল। এই তুলনাতেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে বিরোধী শিবির।
বিজেপির অভিযোগ, ভারতীয় সেনার সঙ্গে পাক সেনার বর্বরতার তুলনা করে দেশের সেনাকে অপমান করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। শুভেন্দু অধিকারী সরাসরি দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানান। তাঁর দাবি, এটি সেনাবাহিনীকে হেয় করার প্রচেষ্টা। শুধু তাই নয়, শুভেন্দুর অভিযোগ, ব্রাত্য বসু আরএসএসের প্রাক্তন প্রধান এম. এস. গোলওয়ালকারকে নিয়েও ভুল তথ্য দিয়েছেন। গোলওয়ালকার ও নেহরুর ভাষাভিত্তিক রাজ্যভাগ প্রসঙ্গ টেনে এনে বিভ্রান্তি তৈরি করেছেন বলে দাবি শুভেন্দুর। তিনি প্রকাশ্যেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন যে, শিক্ষামন্ত্রীকে এই বক্তব্যের প্রমাণ বিধানসভার সচিবালয়ে জমা দিতে হবে। জবাবে ব্রাত্য জানান, তিনি নথি জমা দেবেন।
তবে বিরোধীদের বিক্ষোভে অধিবেশন একপ্রকার অচল হয়ে পড়ে। বহুবার কক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করেন স্পিকার। কিন্তু ক্ষোভে ফেটে পড়া বিজেপি বিধায়করা স্লোগান থামাতে রাজি হননি। একপর্যায়ে স্পিকার ঘোষণা করেন, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে এই অধিবেশনের জন্য সাসপেন্ড করা হল। সিদ্ধান্ত ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই ক্ষোভে অধিবেশন কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে যান বিজেপির সমস্ত বিধায়ক।
তৃণমূল শিবিরের বক্তব্য, বিজেপি ইচ্ছাকৃতভাবে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যকে বিকৃত করে বিতর্ক তৈরি করছে। অন্যদিকে, বিজেপির অভিযোগ, সেনাকে জড়িয়ে এমন মন্তব্য কোনওভাবেই দেশপ্রেমের সঙ্গে খাপ খায় না, তাই রাজ্যের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে তাঁরা আন্দোলনে নামবেন। ফলে মঙ্গলবারের অধিবেশন কার্যত হট্টগোলের মধ্যেই থমকে যায়।