দক্ষিণ কলকাতার ফুসফুস বলা হয় রবীন্দ্র সরোবরকে। তাই নানা উদ্যোগ নেওয়া হয় পরিবেশ দূষণ ঠেকাতে। ছট পুজোয় বা অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানে রবীন্দ্র সরোবর বন্ধ রাখা হয়। যাতে এই সরোবরের জল দূষিত হয়ে না পড়ে। অথচ এবার এই সরোবরেই জমেছে ভারী ধাতুর আস্তরণ বলে অভিযোগ। আর তার জেরে বিপাকে পড়েছে জলজ জীবন। এই ভারী ধাতুর আস্তরণ যদি অবিলম্বে তুলে ফেলা না যায় তাহলে রবীন্দ্র সরোবরের জলে থাকা মাছ–সহ অন্যান্য জলজ প্রাণীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা। আর তাই পরিবেশ নষ্ট না করে সরোবরের জল থেকে পলি তোলার কাজে পদক্ষেপ করল কেএমডিএ।
রবীন্দ্র সরোবরে সকাল এবং সন্ধ্যায় নাগরিকরা ভিড় করেন। এখানে শারীরিক কসরৎ থেকে শুরু করে প্রাতঃভ্রমণ, সান্ধ্যভ্রমণ করে থাকেন। পরিশুদ্ধ অক্সিজেন নিতেই এখানে আসেন মানুষজন। এখানে থাকা নানা ক্লাব এবং সংগঠনে নতুন প্রজন্মের ছেলে–মেয়েরা নানা বিষয় শেখেন। গরমকালে লেকের জলের ঠাণ্ডা হাওয়া উপভোগ করেন প্রবীণ নাগরিকরা। জীবনীশক্তি বাড়াতে ভিড় করেন প্রচুর মানুষজন। এখানেই কিছুদিন আগে রবীন্দ্র সরোবরের জলে মাছ মরে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আর এবার ভারী ধাতুর আস্তরণ জমার ঘটনায় পরিবেশপ্রেমীরা মনে করছেন, রবীন্দ্র সরোবরে বেড়েছে দূষণের পরিমাণ।
আরও পড়ুন: ‘অভিনন্দনের মতো পূর্ণমকেও ছাড়িয়ে আনা হবে’, উত্তরপাড়া থেকে ঘোষণা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর
এখানে দশকের পর দশক ধরে সঠিকভাবে পলি তোলার কাজ হয়নি। তার জেরেই রবীন্দ্র সরোবরে জমেছে ভারী ধাতুর আস্তরণ। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের করা সমীক্ষায় মিলেছে দস্তা, ম্যাগনেসিয়ামের মতো ধাতুর উপস্থিতি। যা রবীন্দ্র সরোবরের জলজ প্রাণীদের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর। এই বিষয়ে কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটির এক অফিসার বলেন, ‘জলের মান আপাতত সন্তোষজনক বলেই দেখা যাচ্ছে। রবীন্দ্র সরোবরের তলায় যে পলি জমেছে, তার মধ্যে বিষাক্ত ধাতুর উপস্থিতি রয়েছে। দ্রুত আমরা এই রিপোর্ট পরিবেশবিদ কল্যাণ রুদ্রর নেতৃত্বে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বিশেষজ্ঞ কমিটির কাছে পাঠাব।’
কেএমডিএ রবীন্দ্র সরোবর মেনটেন্যান্সের দায়িত্বে আছে। এখানে বহুদিন পলি তোলা হয়নি বলে অভিযোগ। তার জেরেই জমেছে এই ভারী ধাতব আস্তরণ। গোটা জলাশয় জুড়ে পূর্ণাঙ্গ ড্রেজিং কখনও হয়নি। তাই সরোবরের জলের তলায় জমেছে শেওলা, জৈব বর্জ্য, পাখির বিষ্ঠা এবং নানারকম রাসায়নিক। এই কারণেই জল দূষিত হচ্ছে বলে সকলের ধারণা। জল ও পলির গুণমান পরীক্ষা করা হচ্ছে। রবীন্দ্র সরোবরের গভীরতা পরিমাপের কাজও চলছে। একটি বেসরকারি সংস্থা জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলা করেছে। তার প্রেক্ষিতেই গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির বৈঠকে রবীন্দ্র সরোবরের জল ও পলির গুণমান পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের মতে, পলি তোলার কাজ একান্ত প্রয়োজনীয়।