৯ অগস্ট রাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে কী ঘটেছিল? কীভাবে তিন তলার বারান্দা থেকে পড়ে গিয়েছিল পড়ুয়া? সেক্ষেত্রে এটি আদৌও আত্মহত্যা নাকি দুর্ঘটনা? তা নিয়ে ধোঁয়াশা কিছুতেই কাটছে না। প্রত্যেকের বয়ানেই কিছু না কিছু অসঙ্গতি থেকে যাচ্ছে। এই অবস্থায় মৃত ছাত্রের সম ওজন ও উচ্চতার ডামি তৈরি করেছে পুলিশ। সেই ডামি ৩ তলার বারান্দা থেকে ফেলেই ঘটনার পুনর্নির্মাণ করছে কলকাতা পুলিশ। তিন তলার বারান্দা থেকে পড়ুয়া যতটা দূরে পড়েছিল ডামি ফেলে সেই দূরত্ব একই হচ্ছে কি না তা দেখছেন তদন্তকারীরা। যে জায়গা থেকে পড়ুয়া পড়ে গিয়েছিল ঠিক সেখান থেকেই ফেলা হচ্ছে ডামি। এর জন্য সোমবার ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের একটি দল যায় যাদবপুর মেইন হস্টেলে।
আরও পড়ুন: যাদবপুরের কাছে ফের রিপোর্ট তলব UGC-র, ব়্যাগিং ঠেকাতে আসছে কুইক রেসপন্স টিম
এর আগে ধৃত ছাত্র সপ্তক কামিল্যাকে হস্টেলে নিয়ে গিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করেছেন তদন্তকারীরা। তবে ধৃতদের প্রত্যেকেরই বয়ানে অসঙ্গতি থাকায় তাদের পৃথক পৃথকভাবে হস্টেলে নিয়ে গিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করার কথা ভাবছে পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মেইন হস্টেলের এ ২ ব্লকের ৬৮ নম্বর ঘরে থাকত মৃত পড়ুয়া। ধৃত প্রাক্তনী সৌরভ চৌধুরীর নির্দেশেই তাকে ওই ঘরে রাখা হয়েছিল। তবে ছাত্র-নিগ্রহের ঘটনা ঘটেছিল ১০৪ নম্বর ঘরে। এর আগে গত ১৮ অগস্ট সপ্তককে সেই ঘরে নিয়ে গিয়েছিলেন তদন্তকারীরা। এছাড়া, ছাত্রের ইন্ট্রো কোন ঘরে হয়েছিল সেবিষয়টিও সপ্তককে নিয়ে গিয়ে খতিয়ে দেখেন তদন্তকারীরা।
প্রসঙ্গত, ঘটনার সময় জেনারেল বডির বৈঠক চলছিল। সেই সময় তিন তলার বারান্দায় হৈ চৈ শব্দ শোনা যায়। তখন প্রথম বর্ষের পড়ুয়া নগ্ন অবস্থাতেই ছিল। এরপরে বারান্দা থেকে ওই পড়ুয়া ঝাঁপ দেয় বলে দাবি করেছে ধৃত পড়ুয়ারা। তবে এনিয়েও ধৃতদের বয়ানে অসঙ্গতি রয়েছে। ফলে ৯ অগস্ট রাতে ঠিক কী ঘটেছিল? সেই তথ্য খতিয়ে দেখতে প্রত্যেকযে আলাদাভাবে মেন হস্টেলে নিয়ে গিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করতে চায়ছে পুলিশ।
উল্লেখ্য, ৯ অগস্ট হস্টেলের ৩ তলার বারান্দা থেকে পড়ে যায় প্রথম বর্ষের পড়ুয়া। ছাত্ররাই তাকে উদ্ধার করে কেপিসি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে ছাত্রটি পড়ে যাওয়ার পরেই পুলিশ যাতে হস্টেলের ভিতরে ঢুকতে না পারে তার জন্য মেন গেটের তালা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পরে পুলিশ ছাত্রদের পিছু নিয়ে কে পি সি হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারে প্রথম বর্ষের পড়ুয়ারা মৃত্যু হয়েছে। ইতিমধ্যে, এই ঘটনার তদন্ত নেমে ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের বয়ানে অসঙ্গতি মেলায় বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন খোদ কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। আর এবার প্রত্যেক পড়ুয়াকে আলাদাভাবে নিয়ে গিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করবে পুলিশ।