সময়টা ছিল অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ - ১৭৮৮-৮৯ সাল হবে। পরাধীন ভারতে ভারতীয়দের অবস্থাই ছিল সবথেকে খারাপ। নারীর অবস্থা তো আরও শোচনীয়। কিন্তু, সেই প্রেক্ষাপটেই প্রবল প্রতাপশালী ব্রিটিশ বণিক তথা শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন এক নারী। তাঁর নেতৃত্বে সংগঠিত হয়েছিলেন ভিনদেশি শাসকের অত্যাচারে বিধ্বস্ত কৃষক-সহ ভূমিজ সন্তানরা।
সেই ঘটনা আজও ভারতের ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে - যাকে আমরা জানি দ্বিতীয় চুয়াড় বিদ্রোহ নামে। যিনি সেই বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তিনি রানি শিরোমণি। তাঁর ইতিহাস যাতে বাংলার স্কুলগুলির পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, সেই দাবি বহু দিন ধরেই উঠছিল। এবার সেই দাবি পূরণের আশ্বাস দিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
বর্তমানে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনি ব্লকের কর্ণগড় বলে যে জায়গাটি রয়েছে, সেখানেই রয়েছে রানি শিরোমণির গড়। ইতিমধ্যেই রানি শিরোমণির গড়-কে রাজ্যের হেরিটেজ কমিশনের পক্ষ থেকে প্রত্নতাত্ত্বিক মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। তারপর থেকে রানি শিরোমণি ও তাঁর সহযোদ্ধাদের সংগ্রামের ইতিহাস বাংলার পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি আরও জোরদার হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫) পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবানিতে প্রাথমিক স্কুলগুলিকে নিয়ে আয়োজিত হয় ৪০তম রাজ্য বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। সেই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। সেই অনুষ্ঠানে এসেই রাজ্যের স্কুলগুলির পাঠ্যসূচিতে চুয়াড় বিদ্রোহ ও তাতে রানি শিরোমণির অবদানের ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, সংশ্লিষ্ট অনুষ্ঠানটির মঞ্চও নির্মাণ করা হয়েছিল রানি শিরোমনির গড়ের মতো করে। শুক্রবার সেই মঞ্চে দাঁড়িয়ে রানি শিরোমণির বীরত্বের গাথা উল্লেখ করেন শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি জানান, রানি শিরোমণির ইতিহাস পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে আগেই রাজ্যের সেচমন্ত্রী তথা পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ের বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার সঙ্গে তাঁর কথাবার্তা হয়েছে। এছাড়াও, তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষও তাঁকে এই বিষয়টি নিয়ে আবেদন করেছিলেন। আর, পশ্চিম মেদিনীপুরের মানুষ তো দীর্ঘদিন এই দাবি জানিয়েই আসছেন।
সেই সমস্ত প্রসঙ্গ উত্থাপন করে মন্ত্রী জানান, বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব রাখা হবে। এবং মুখ্যমন্ত্রী সেই প্রস্তাব অনুমোদন করলে তা সিলেবাস কমিটির কাছে পাঠানো হবে। এবং তারপর নিয়ম মাফিক চুয়াড় বিদ্রোহ ও রানি শিরোমণির ইতিহাস পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এই প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব বলেই মনে করছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য় বসু।