একদিকে বাংলায় সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদের নামে যথেচ্ছ হিংসা, অন্যদিকে 'টার্গেট কিলিং'-এ রক্তাক্ত ভূস্বর্গ! এমন এক দমবন্ধ করা আবহে সামনে এল আরও এক বিতর্ক! যা কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে একটি মেধাতালিকা। যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে।সেই মেধাতালিকায় দেখা যাচ্ছে, যাঁরা পিএইচডি কোর্সে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের নাম, জাতি ও অন্যান্য তথ্যের পাশাপাশি তাঁদের ধর্মীয় পরিচয়ও উল্লেখ করা হয়েছে। যা একেবারেই প্রচলিত নয় বলে দাবি সূত্রের।বিষয়টি সংবাদমাধ্যমের নজরে আসতেই এ নিয়ে লেখালিখি শুরু হয়েছে। পিএইচডি-তে আবেদনকারীরা উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবেন তাঁদের মেধার ভিত্তিতে। এর সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের ধর্মীয় পরিচয় জানার বা জানানোর কী প্রয়োজন পড়ল? এই প্রশ্নের যে সোজাসাপটা কোনও জবাব পাওয়া গিয়েছে, এমনটা অন্তত এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে, শোনা যাচ্ছে - বিশ্ববিদ্যালয়েরই অধ্যাপকদের একটা অংশ এর প্রতিবাদে সরব হয়েছেন।এই প্রতিবাদী অধ্যাপকরা নিজেদের নাম প্রকাশে রাজি না হলেও তাঁদের আশঙ্কা, যোগ্যতার মানদণ্ডে আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদনকারীর ধর্মীয় পরিচয়ের উল্লেখ বর্তমান প্রেক্ষাপটে যথেষ্ট উদ্বেগের। এটিকে বর্তমান কর্তৃপক্ষের বিশেষ মানসিকতার বৈশিষ্ট্য বলেও মনে করছেন অধ্যাপকদের একাংশ। তাঁদের মতে, এসব করে আদতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিই নষ্ট হবে।বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রধান সৈয়দ তনভির নাসরিন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আবেদনকারীর ধর্মীয় পরিচয় এভাবে আনুষ্ঠানিকভাবে উল্লেখ করার কোনও গুরুত্ব নেই। অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক (কন্ট্রোলার অফ এগজামিনার), আর্টস ফ্যাকাল্টির ডিনের সঙ্গে সংবাদমাধ্যমের তরফে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁদের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি বলেই দাবি করা হচ্ছে।এদিকে আবার আনন্দবাজার ডট কম অনুসারে - বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শঙ্করকুমার নাথ এই বিষয়টি নিয়ে একাধিক ভিন্ন মন্তব্য করেছেন। যেমন - প্রথমে তিনি জানান, যেহেতু এই বিষয়ে চূড়ান্ত মেধাতালিকা প্রস্তুত হয়নি, তাই তাঁর পক্ষে কিছু বলা সম্ভব নয়।পরে আবার তিনিই জানান, 'কম্পিউটারে যে সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়, তার সাহায্যে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। তাতেই সম্ভবত ধর্ম সম্পর্কিত কলামটি ছিল। এর সঙ্গে গবেষকদের মেধা বা যোগ্যতা যাচাইয়ের কোনও সম্পর্ক নেই। তা ছাড়াও পড়ুয়াদের ধর্ম কী, সেটা জেনেই বা কী ক্ষতি হবে?' উপাচার্য সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, চূড়ান্ত মেধাতালিকায় যাতে এই কলাম না থাকে, তা নিশ্চিত করা হবে।এর পাশাপাশি, বিশ্ববিদ্যালয়েরই একটি সূত্র দাবি করেছে, আবেদনকারীদের মধ্যে কোন কোন হিন্দু ও মুসলমান প্রার্থী ওবিসি তালিকাভুক্ত, তা জানার জন্য ধর্মীয় পরিচয় সংক্রান্ত কলামটি যুক্ত করা হয়েছে।