মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল,২০২৫) রাতেও তিনি এসএসসি চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদারের সঙ্গে 'যোগ্য' চাকরিহারা শিক্ষকদের প্রতিনিধি হিসাবে বৈঠক করেছিলেন। সেই বৈঠক শেষ হলে, তাঁকেই দেখা গিয়েছিল সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে। বাস্তবিক অর্থেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন 'যোগ্য' চাকরিহারা শিক্ষকদের আন্দোলনের 'মুখ'। কিন্তু, রাজ্য প্রশাসনের তরফে সর্বশেষ যে 'যোগ্য'-তালিকা প্রস্তত করা হয়েছে, সেই তালিকা থেকে তিনিই বাতিল হয়ে গিয়েছেন! তিনি চিন্ময় মণ্ডল।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার রাত থেকেই রাজ্যের তরফে প্রত্যেক জেলার ডিআই অফিসে 'যোগ্য' চাকরিহারাদের নয়া তালিকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যদিও এই তালিকা চূড়ান্ত কিনা, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়।
ঘটনা হল, এর আগেও সুপ্রিম কোর্টে 'যোগ্য' চাকরিহারা শিক্ষকদের একটি তালিকা পেশ করা হয়েছিল। সেই তালিকায় ছিলেন - ১৭,২০৬ জন। কিন্তু, নয়া তালিকায় সেখান থেকে আরও ১,৮০৩ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, তাঁদের নিয়োগে কিছু ত্রুটি বা সমস্যা ধরে পড়েছে। যদিও সেটা ঠিক কী, সেটা আনুষ্ঠানিকভাবে স্পষ্ট করা হয়নি। অর্থাৎ - সর্বশেষ এই তালিকায় স্থান পেয়েছেন মোট ১৫,৪০৩ 'যোগ্য' শিক্ষক।
বুধবার (২৩ এপ্রিল, ২০২৫) সংবাদমাধ্যমে যে তথ্য উঠে এসেছে, সেই অনুসারে - নয়া তালিকায় নিজের নাম খুঁজে পাননি চিন্ময় মণ্ডল-সহ আরও অনেক আন্দোলনকারী। তাঁদের অনুমান, এই তালিকা ত্রুটিপূর্ণ। সাধারণত, যে শিক্ষকরা 'যোগ্যতা'র প্রমাণ দিয়ে চাকরি পাওয়ার পর এক স্কুল থেকে অন্য স্কুলে ট্রান্সফার নিয়েছিলেন, তাঁদের একাংশের নাম নয়া তালিকায় বাদ পড়েছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হবে বলে জানিয়েছেন চিন্ময়।
সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, 'যোগ্যদের তালিকায় কিছু অসঙ্গতি দেখা যাচ্ছে। মামলাকারী অনেকের নামই নেই। আমার নামও নেই। সাধারণভাবে যাঁরা একটি স্কুলে চাকরি করতে করতে পরে অন্য স্কুলে বদলি নিয়েছেন, সেই তথ্য কমিশনের কাছে নেই। ওরা প্রথম স্কুলের কাছেই তালিকা পাঠিয়েছে। তবে আমার নাম প্রথম বা দ্বিতীয়, কোনও স্কুলের কাছেই আসেনি। এর কী কারণ, কী ব্যাখ্যা আমার জানা নেই। কী এমন ঘটল যে আমাদের নাম বাদ পড়ে গেল, বুঝে উঠতে পারছি না।'
তাহলে এখন চিন্ময়রা কী করবেন? আনন্দবাজার ডট কম অনুসারে - তিনি বলেন, 'যাঁরা নিজেদের যোগ্য বলে দাবি করছেন, কিন্তু তালিকায় নাম আসেনি, আমরা তাঁদের নাম সংগ্রহ করছি। একটি তালিকা তৈরি করছি। এসএসসি-কে সেই তালিকা পাঠাব। যোগ্যরা যাতে চাকরি ফিরে পান, তা নিশ্চিত করতে হবে।'
এই আন্দোলনের আরও এক 'মুখ' মেহবুব মণ্ডলের নাম অবশ্য নয়া তালিকায় রয়েছে। চিন্ময়ের নাম না থাকা সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য হল, 'কিছু একটা গন্ডগোল হয়েছে। অনেকে বদলি নিয়েছিলেন। কোন স্কুলে তাঁদের নাম যাবে, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। এছাড়া কিছু প্রযুক্তিগত ত্রুটিও থাকতে পারে। গুগল ফর্মের মাধ্যমে এই ধরনের শিক্ষকদের নাম, রোল নম্বর সংগ্রহ করা হচ্ছে। এসএসসি-র সঙ্গে তা নিয়ে আলোচনা হবে।'
মেহবুবের আরও দাবি, 'যাঁরা যোগ্য, যাঁরা দাগি নন, আমরা তাঁদের সঙ্গে আছি। আমরা সমস্ত নথি, সিবিআই-এর চার্জশিট, উত্তরপত্র যাচাই করে মামলাকারীদের তালিকা বানিয়েছিলাম। তাঁদের মধ্যে কেউ ভুয়ো নেই। অযোগ্য নেই। নিশ্চিতভাবেই এই তালিকায় প্রযুক্তিগত ত্রুটি রয়েছে।'
সূত্রের দাবি, প্রশাসনের তরফে তালিকা প্রকাশের পর 'যোগ্য'রা স্কুলের কাজে যোগ দেওয়ার বিষয়ে ভাবনা-চিন্তা শুরু করেছেন। তবে, আন্দোলন চলবে। সেটা কীভাবে, তা সকলে মিলে আলোচনা করে স্থির করা হবে।