ইলিশের মরশুমে মাছ ধরতে গভীর সমুদ্রে পারি দিচ্ছে মৎস্যজীবীদের ট্রলার। আর ইলিশ ধরতে সমুদ্রে যাওয়ার আগেই ঘটল বিপত্তি। হঠাৎ মাঝ নদীতে তলিয়ে গেল ট্রলার। ঘটনাটি ঘটেছে রায়দিঘির জেটিঘাটে। মণি নদীর জলে হঠাৎ তলিয়ে গেল ‘মা অন্নপূর্ণা’ নামে একটি মাছ ধরার ট্রলার।
আরও পড়ুন: গভীর সমুদ্রে বিপর্যয়, ডুবল দু’টি ট্রলার, প্রাণে বাঁচলেন ২৭ জন মৎস্যজীবী
জানা যাচ্ছে, ট্রলারটি যাচ্ছিল বঙ্গোপসাগরে। লক্ষ্য ছিল একটাই, মরশুমি ইলিশ ধরা। সঙ্গে ছিল প্রায় চার হাজার লিটার ডিজেল, ইলিশ ধরার দামি জাল, আর প্রচুর বরফ। সব কিছু প্রস্তুতি থাকলেও ট্রলারটির রওনা দেওয়া আর হল না। জেটির কাছেই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ট্রলারটি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, জেটি ঘাটে নোঙর করতে গিয়ে ট্রলারটির নিচে ঢুকে যায় দু’টি মোটা লোহার রড, যা জেটির একপাশ থেকে কিছুটা বাইরে বেরিয়ে ছিল। সেই চাপেই তলায় বড়সড় ফুটো হয়ে যায়। তার পর আর দেরি হয়নি। দ্রুত জল ঢুকতে থাকে, আর কয়েক মিনিটের মধ্যেই ট্রলারটা পুরোপুরি জলের নিচে তলিয়ে যায়।
ঘটনাস্থল ছিল একেবারে তীরঘেঁষা। অথচ এত কাছে থেকেও কিছু করতে পারেননি আশপাশে থাকা মৎস্যজীবীরা। কেউ আহত না হলেও, আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ মাথায় হাত দেওয়ার মতো। ডিজেল, বরফ, জাল সবই জলের তলায়। প্রাথমিক হিসেব বলছে, লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে। ট্রলারটির মালিক এবং সঙ্গে থাকা কর্মীরা এই ঘটনায় কার্যত দিশেহারা। কারও মুখে কথা নেই। ইলিশ মরসুমের শুরুতেই এভাবে ধাক্কা খেয়ে তাঁরা বুঝতেই পারছেন না, কী করে উঠে দাঁড়াবেন। ঘটনার পরে দ্রুত শুরু হয় উদ্ধারকাজ। স্থানীয় বাসিন্দা এবং প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে ট্রলারটি তুলতে তৎপরতা চলছে। তবে এত ঘন বরফ আর ভারী জালের কারণে ট্রলারটি এখনও পুরোপুরি জল থেকে তোলা যায়নি।
এই দুর্ঘটনার পরেই জেটির নিরাপত্তা এবং রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন রায়দিঘির মৎস্যজীবীরা। তাঁদের অভিযোগ, বহুবার বলেও জেটির রড ও অন্যান্য বিপজ্জনক দিকগুলো ঠিক করা হয়নি। এখন মাছ ধরার মরসুম, আর তার আগেই এমন একটা ঘটনা হয়ে যাওয়ায় আতঙ্কে বহু মৎস্যজীবী পরিবার। শুধুই রোজগার নয়, এ যে তাঁদের জীবনের ভরসা। ট্রলার ডুবলে যেন জীবিকাও ডুবে যায়। এই ঘটনায় প্রশাসনের তরফ থেকে তদন্ত শুরু হয়েছে। কিন্তু স্থানীয়দের প্রশ্ন, যতক্ষণ না জেটির পরিকাঠামো ঢেলে সাজানো হয়, ততদিন এই বিপদ কি থামবে?