ফের বিপর্যয় গভীর সমুদ্রে। মাছ ধরতে গিয়ে পরপর ডুবে গেল দুটি ট্রলার। তবে সৌভাগ্যক্রমে প্রাণে রক্ষা পেলেন সব মৎস্যজীবী। শনিবার সকাল ও শুক্রবার রাতে দুটি ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটে। তবে পর পর দুটি ট্রলারডুবির ঘটনায় ব্যাপক উদ্বেগ ছড়ালেও স্বস্তি একটাই যে কোনও প্রাণহানি হয়নি। এরমধ্যে ট্রলারগুলিকে উদ্ধার করে উপকূলে নিয়ে আসা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: সমুদ্রে মৎস্যজীবীদের নিরাপত্তায় ইসরোর নতুন যন্ত্র, বসানো শুরু করল রাজ্য সরকার
মৎস্যজীবীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, নামখানার ১০ মাইল খেয়াঘাট থেকে সমুদ্রে রওনা দেয় ‘এফবি সাকিলা’ নামের একটি মাছ ধরার ট্রলার। তাতে ছিলেন মোট ১১ জন মৎস্যজীবী। গন্তব্য ছিল জম্বুদ্বীপের আশপাশের গভীর সমুদ্র। সমুদ্রের অনেকটা ভিতরে চলে যাওয়ার পরই ঘটে বিপত্তি। হঠাৎই ট্রলারটির সি-কক পাইপ ফেটে যায়। মুহূর্তে জল ঢুকতে শুরু করে ইঞ্জিন ঘরে। ইঞ্জিন থেমে গেলে সামুদ্রিক ঢেউয়ের মুখে কার্যত অসহায় হয়ে পড়ে ট্রলারটি।
তখনই আশপাশে থাকা আরও কয়েকটি ট্রলারের নজরে আসে বিপদে পড়া জলযানটি। পরিস্থিতি বুঝেই দ্রুত এগিয়ে আসেন অন্য ট্রলারগুলির মৎস্যজীবীরা। তারাই উদ্ধার করেন এফবি সাকিলার ১১ জন মৎস্যজীবীকে। তাঁদের প্রথমে সমুদ্রের বুকেই উদ্ধার করে কাছাকাছি একটি ট্রলারে তোলা হয়। পরে নিরাপদে ফিরিয়ে আনা হয় উপকূলে।
অন্যদিকে, একই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে তার আগের দিন।শুক্রবার রাতেও। ‘এফবি মা দুর্গা’ নামের আরও একটি ট্রলার ১৬ জন মৎস্যজীবীকে নিয়ে শুক্রবার সকালে নামখানার খেয়াঘাট থেকে রওনা দিয়েছিল গভীর সমুদ্রে। রাত ১০টা নাগাদ, যখন ট্রলারটি কেঁদুয়া দ্বীপ পেরিয়ে সমুদ্রের আরও গভীরে। তখন আচমকা ট্রলারটির তলার কাঠের তক্তা খুলে যায়। শুরু হয় জল ভিতরে ঢোকা। কিছুক্ষণের মধ্যেই ট্রলারের একটা বড় অংশ জলের তলায় চলে যায়।মৎস্যজীবীরা প্রাণ বাঁচাতে তখন চিৎকার শুরু করেন। তাঁদের সেই আর্তনাদ পৌঁছে যায় কাছাকাছি থাকা অন্য ট্রলারগুলির মৎস্যজীবীদের কানে। সাহায্য করতে দেরি করেননি কেউ। তড়িঘড়ি উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয় ‘এফবি মা দুর্গা’র ১৬ জন কর্মীকে।
এই প্রসঙ্গে সুন্দরবন সামুদ্রিক মৎস্যজীবী শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক সতীনাথ পাত্র জানিয়েছেন, সম্প্রতি খারাপ আবহাওয়া কেটে যাওয়ার পর ট্রলারগুলি আবার মাছ ধরতে সমুদ্রে বেরিয়েছিল। মরশুমের শুরুতেই দুটি ট্রলার ডুবে যাওয়া উদ্বেগজনক। তবে যেটা স্বস্তির বিষয়, তা হল সব মৎস্যজীবী সুস্থ ও নিরাপদে ফিরে এসেছেন। এখন প্রশ্ন উঠছে, ট্রলারগুলির কাঠামোগত ত্রুটি বা রক্ষণাবেক্ষণের খামতি আদৌ এই ধরনের দুর্ঘটনার জন্য দায়ী কি না। সমুদ্রযাত্রার আগে যথাযথ প্রযুক্তিগত পরীক্ষা ও নিরাপত্তা নিয়ম কতটা মানা হয় তা নিয়েই উঠছে নানা প্রশ্ন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানা গিয়েছে, ডুবে যাওয়া ট্রলারগুলিকে টেনে উপকূলে আনার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি, এমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সে জন্য সতর্কতা জারি করা হয়েছে মৎস্যজীবী সংগঠনগুলিকে।