প্রথমজন প্রাথমিক শিক্ষক এবং সেইসঙ্গে চিত্রশিল্পী ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি)-এর সদস্য। দ্বিতীয়জন বিজেপিকর্মী এবং পুলিশের দাবি অনুসারে - বেআইনি অস্ত্রের কারবারি! আপাতত দু'জনকেই গ্রেফতার করে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। চলছে জেরা। পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরের এই ঘটনায় রং লেগেছে রাজনীতির, চড়ছে উত্তেজনার পারদ।ঘটনা প্রসঙ্গে জানা গিয়েছে, ভগবানপুরের পূর্ব রাধাপুর এমনিতে শান্তি এলাকা। সেই এলাকারই বাসিন্দা তরুণ পাত্র পেশায় প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সদস্য। এছাড়া, তিনি ছবিও আঁকেন। নিজের ছবি আঁকার ভিডিয়ো ইউটিউবে আপলোড করেন তিনি। এলাকায় শান্ত, নির্ঝঞ্ঝাট মানুষ হিসাবেই পরিচিত। কিন্তু, এরই মধ্য়ে পুলিশের কাছে খবর আসে, ওই শিক্ষক নিজের বাড়িতে বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র ও কার্তুজ এনে রেখেছেন!খবর পেয়ে তরুণ পাত্রের বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি চালায় পুলিশ। উদ্ধার হয় এক বেআইনি নাইন এমএম পিস্তল এবং চার রাউন্ড গুলি। পুলিশের দাবি, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তরুণ তাঁদের জানান, তিনি প্রবোধ মহাপাত্রের কাছ থেকে ওই পিস্তল ও গুলি কিনেছেন এবং কেবলমাত্র নিজের আত্মরক্ষার জন্যই তিনি এগুলি সংগ্রহ করেছেন। স্বাভাবিকভাবেই এক্ষেত্রে প্রশ্ন ওঠে, শান্ত এলাকার একজন নির্ঝঞ্ঝাট মানুষকে হঠাৎ করে আত্মরক্ষার জন্য আগ্নেয়াস্ত্র কিনতে হল কেন? এবং যদি তাঁকে সেটা কিনতেই হয়, তাহলে বেআইনি অস্ত্র ও কার্তুজ কেন কিনলেন? পুলিশও আপাতত এইসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে।তরুণের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে পুলিশ জলিবাড়ের বাসিন্দা প্রবোধ মহাপাত্রকেও গ্রেফতার করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র ও কার্তুজ সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে। এবং তিনি এলাকার সক্রিয় বিজেপিকর্মী! ধৃতদের পরে আদালতে পেশ করা হলে দু'জনকেই দু'দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।এই ঘটনা প্রসঙ্গে এগরার এসডিপিও দেবীদয়াল কুণ্ডু সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, 'বেআইনিভাবে আগ্নেয়াস্ত্র বাড়িতে রাখা এবং সেই আগ্নেয়াস্ত্র সরবরাহের অভিযোগে দু'জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কী উদ্দেশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র রেখেছিলেন তিনি, সেই বিষয়ে জেরা করা হচ্ছে।'এদিকে, ধৃতদের একজন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং অন্যজন বিজেপি সদস্য হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই এ নিয়ে রাজনীতি শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই বেআইনি অস্ত্র সরবরাহ ও সংগ্রহের প্রতিবাদ জানিয়ে ভগবানপুর থানায় বিক্ষোভ দেখিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূলকর্মীরা। তৃণমূল কংগ্রেসের ভগবানপুর-১ ব্লকের সভাপতি রবীনচন্দ্র মণ্ডল এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে বলেন, 'বিজেপি এলাকায় সন্ত্রাস ছড়াতে আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি মজুত করছিল। পুলিশের এই দ্রুত পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানাই।'যদিও এই অভিযোগ নস্যাৎ করে দিয়েছে বিজেপি ও ভিএইচপি। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ভগবানপুর-১ প্রখণ্ডের সভাপতি প্রজ্জ্বল দাসের বক্তব্য হল, 'ওই শিক্ষক আমাদের সংগঠনের সদস্য ঠিকই। তবে এলাকায় ওঁর যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। পুলিশ ও তৃণমূল যৌথ পরিকল্পনা করে ওঁকে ফাঁসাচ্ছে। আমরা ওঁদের পাশে রয়েছি।'প্রায় একই সুর শোনা গিয়েছে বিজেপির সাংগঠনিক জেলা (কাঁথি) সভাপতি স্বপন রায়ের গলাতেও। তাঁর কথায়, 'প্রবোধ দলের সক্রিয় কর্মীর হওয়ায় তৃণমূলের নির্দেশে পুলিশ চক্রান্ত করে ওঁকে ফাঁসিয়েছে।'