তিনি সরাসরি কথা বলতে ভালবাসেন। কারও বিরুদ্ধে কোনও ক্ষোভ, অভিযোগ থাকলে তাও সোজাসুজি বলতেই পছন্দ করেন তিনি। তাতে তাঁকে কেউ খারাপ ভাবলে তাঁর কিছু যায় আসে না। কারণ একদিকে তিনি নামী আইনজীবী। অপরদিকে তিনি দুঁদে সাংসদও। ওয়াকফের বৈঠকে বোতল ভেঙে ফেলেছিলেন। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি নানা কথা বললেও তিনি কাউকে ভয় পান না। হ্যাঁ, তিনি শ্রীরামপুরের তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। আর রবিবার একটি দলীয় অনুষ্ঠানে এসে দলের অন্দরের লোকজনকে ভয় পান বলে মন্তব্য করলেন তিনি। আর তাতেই এখন তোলপাড় হয়ে গিয়েছে রাজ্য–রাজনীতি।
তৃণমূল কংগ্রেস বিরোধী আসনে থাকতে অনেক লড়াই–সংগ্রাম করেছেন কল্যাণবাবু। আজ কি তাঁর মনের গভীরে কোনও কষ্ট লুকিয়ে আছে? উঠছে প্রশ্ন। তবে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘দিদি বারবার অনুরোধ করতেন, যাতে দলের ভিতরে সত্যিকারের কর্মীদের খুঁজে পাওয়া যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শেই কুণাল ঘোষের সঙ্গে আলোচনা করে নতুন সংগঠনের কথা ভাবা হয়েছিল। দুর্দিনে আমি আর কুণাল ঘোষ একসঙ্গে লড়াই করেছি। প্রচুর সমালোচনা শুনতে হয়েছে। তবে মনে রাখবেন, যাঁর উপকার করবেন, অনেক সময় তিনিই আপনার মাথায় আঘাত করবেন।’ এই মন্তব্য এখন দলকে অস্বস্তিতে ফেলার পক্ষে যথেষ্ট।
আরও পড়ুন: জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনে ঘোষিত স্পেশাল ট্রেন বাতিল, রেলের বিজ্ঞপ্তিতে বানচাল সফর
যদিও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদানের কথা বারবার তুলে ধরেছেন। বাংলার মানুষের কথা যে সবসময় মুখ্যমন্ত্রী ভাবেন সে কথাও বাতলে দেন। তবে অস্বস্তি রয়েই গিয়েছে কল্যাণের কথায়। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই সবসময় আপনাদের কথা ভাবেন। মনে রাখবেন, উনিই ছিলেন রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী। অন্য রাজনৈতিক দলগুলির উদ্দেশ্য আপনাদের ক্ষতি করা হলেও দিদির নেতৃত্বে আমরা সবসময় সেই ক্ষতির ঊর্ধ্বে উঠে আপনাদের পাশে থাকব। আপনাদের ভয়ের কিছু নেই। শুধু কাজ করে যান। আমরা পাশে আছি।’ এই কথাগুলি বললেও কার দিকে ইঙ্গিত করলেন সেটা খোলসা করেননি।
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক সময়ই দলের বিধায়ক থেকে শুরু করে নেতাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। দলের ছাত্র–যুব সংগঠনের কাজ নিয়ে সমালোচনা করেছেন প্রকাশ্যেই। আবার বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিককে গাড়ি থেকে নামিয়েও দিয়েছেন। আর আজ দলীয় অনুষ্ঠানে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘আমি সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই করে বড় হয়েছি। বিজেপি বা সিপিএম কাউকেই ভয় পাই না। বরং দলের ভিতরের লোকজনের কাছেই ভয় হয়।’ কল্যাণের এই কথায় রাজ্য রাজনীতিতে ঝড় বইতে শুরু করেছে। দলের অন্দরে এখনও কাকে ‘ভয়’ পান কল্যাণ? প্রশ্ন থেকেই গেল।