উৎসবের মরশুমে রাজ্যের প্রায় পাঁচ হাজার পাত্রী বসতে চলেছেন বিয়ের আসরে। তাঁদের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে রাজ্য সরকারের আর্থিক সহায়তা। রূপশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে একেকজনকে দেওয়া হচ্ছে ২৫ হাজার টাকা করে। প্রশাসনিক হিসেবে দেখা যাচ্ছে, মোট প্রায় ৪৮০০ কন্যাকে বিয়ের মরশুমে এই সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, যার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে প্রায় ১২ কোটি টাকা। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পূর্ব বর্ধমানের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে কয়েকজন পাত্রীর হাতে সরাসরি শাড়ি-সহ কিছু সামগ্রী তুলে দেন। সেই সঙ্গে তাঁদের অ্যাকাউন্টেও পৌঁছে যায় সরকারি সহায়তার টাকা।
আরও পড়ুন: পাত্রের বয়স ২১-র কম, জন্ম শংসাপত্র জাল করে রূপশ্রীর আবেদন, ধৃত কনের বাবা-মা
প্রশাসন সূত্রে খবর, সাম্প্রতিক সময়ে রূপশ্রী প্রকল্পে অনিয়মের ঘটনা সামনে এসেছিল। কোথাও গৃহবধূদের নামে কার্ড ছাপিয়ে টাকা তোলার অভিযোগ উঠেছিল। এরপর কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন প্রতিটি আবেদন খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সরকারি আধিকারিকরা সরাসরি পাত্রীদের বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন, তাঁদের বিয়ে সত্যিই হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার পরেই অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হচ্ছে।রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ জানিয়েছেন, আগে বাবা-মায়েরা মেয়ের বিয়ের জন্য ধারদেনা করতেন, কেউ কেউ সম্পত্তি বিক্রি করতে বাধ্য হতেন। এখন সেই দুশ্চিন্তা নেই। রূপশ্রী প্রকল্পে বিয়ের আগে ২৫ হাজার টাকা মিলছে। পাশাপাশি কন্যাশ্রী কে-টু প্রকল্প থেকেও একই অঙ্কের টাকা পাচ্ছে মেয়েরা। ফলে আর্থিক সঙ্কট না থাকায় বাবা-মায়েরা নির্ভয়ে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন।
এছাড়া প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, রূপশ্রী সুবিধা পেতে হলে বিয়ের নিমন্ত্রণপত্র জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। একই সঙ্গে পরিবারের আয় যাচাই করে তবেই অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার বর্ধমানের সভায় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা অজয় চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, কন্যাশ্রী থেকে মেয়েদের পড়াশোনার খরচ হয়, উচ্চশিক্ষার জন্য রয়েছে স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড। আবার বিয়ের সময় রূপশ্রী প্রকল্পে সাহায্য মিলছে।
অধিকারিকদের মতে, রূপশ্রী প্রকল্পের একটি বড় ইতিবাচক দিক হল, নাবালিকা বিবাহ প্রতিরোধে এর কার্যকারিতা। যেহেতু ১৮ বছরের আগে এই প্রকল্পে টাকা পাওয়া যায় না, তাই পরিবারগুলো কন্যাদের প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে আর বিয়ে দিচ্ছে না। যদিও কিছু ক্ষেত্রে নাবালিকারা নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করছে, তবু প্রশাসন সেই ধরনের ঘটনা রুখতে বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। অর্থাৎ, উৎসবের মরশুমে শুধু বিয়ের আনন্দ নয়, রাজ্যের হাজার হাজার পরিবারে স্বস্তির হাওয়া বইছে রূপশ্রীর টাকায়।