হুগলির বৈদ্যবাটিতে খুনই করা হয়েছে যুগলকে। পরকীয়া, সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং অবশেষে প্রতিহিংসা। তার জেরেই এই খুনের ঘটনা। তদন্তে নেমে দেড় দিনের মধ্যেই ঘটনাটি পুরোপুরি উদ্ঘাটন করল পুলিশ। খুনের অভিযোগ পুলিশ দুই যুবককে গ্রেফতার করেছে। ধৃতেরা হল অর্জুন পাশোয়ান ও নাসিরুদ্দিন শেখ। তাদের মধ্যে অর্জুন হল নিহত তরুণীর বোনের প্রাক্তন প্রেমিক।
আরও পড়ুন: মধ্যরাতে ‘বাঁচাও বাঁচাও’ চিৎকার, রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার যুগল, মৃত্যু দুজনেরই
ঘটনাটি ঘটে বৈদ্যবাটি পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের সীতারাম বাগান এলাকায়। সেখানকার একটি ভাড়াবাড়ি থেকে বৃহস্পতিবার ভোররাতে উদ্ধার হয় ৩৫ বছরের মনীশ ভাদুড়ি এবং ৩২ বছরের অপর্ণা মাঝির রক্তাক্ত দেহ। তাঁরা দুজনই আর্তনাদ করেন। কিন্তু, প্রতিবেশীরা সেখানে পৌঁছতেই তাঁদের রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। তাঁরা পুলিশে খবর দেন। পুলিশ এসে দু’জনকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় শ্রীরামপুর ওয়ালস হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকরা তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, অপর্ণার ছোট বোন রিম্পা একসময় নিজের স্বামীকে ছেড়ে হাওড়ার বাসিন্দা অর্জুন পাশোয়ানের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। অর্জুন পেশায় গাড়িচালক। প্রেমপর্ব চলাকালীন তাঁরা কিছুদিন তেলেঙ্গানাতেও ছিলেন। তবে কিছু সময় আগে রিম্পা সেই সম্পর্ক থেকে সরে আসেন। অর্জুন তা মানতে পারেনি। বারবার রিম্পাকে বিরক্ত করছিল সে। এই পরিস্থিতিতে অপর্ণা বোনের পাশে দাঁড়িয়ে অর্জুনকে সতর্ক করেন। এখান থেকেই বেঁধে যায় মূল বিবাদ।
জানা গিয়েছে, খুনের ঠিক তিনদিন আগে অর্জুন বৈদ্যবাটিতে এসে অপর্ণার সঙ্গে তুমুল বচসায় জড়িয়ে পড়ে। প্রকাশ্যেই অপর্ণা তাঁকে চড় মারেন বলে অভিযোগ। সেই অপমানই তাঁর মনে গভীর ক্ষোভ তৈরি করে। পুলিশের অনুমান, এরপরই খুনের পরিকল্পনা করে অর্জুন। বুধবার শিয়ালদা থেকে ছুরি কিনে বৈদ্যবাটিতে আসে অর্জুন। রাতভর এলাকায় ঘুরে ভোররাতে চুপিসারে ঢুকে পড়ে অপর্ণাদের ঘরে। এরপর ঘুমিয়ে থাকা অপর্ণা ও মনীশের ওপর একের পর এক ছুরি চালায়। দু’জনের শরীরে একাধিক গভীর ক্ষত পাওয়া যায়।
তদন্তকারীরা সিসিটিভি ফুটেজ ও স্থানীয় সূত্রে অর্জুন ও তার এক সহযোগী নাসিরুদ্দিন শেখের নাম জানতে পারেন। এরপর জগদীশপুর ও মহেশতলায় আলাদা দুটি দল অভিযান চালিয়ে দু’জনকে গ্রেফতার করে। শুক্রবার ধৃতদের শ্রীরামপুর আদালতে তোলা হয়। পুলিশ মনে করছে, সম্পর্কভঙ্গ ও অপমানের জেরে প্রতিশোধ নিতে গিয়েই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে অর্জুন।