বাংলা ভাষাকে অপমান, ভিন রাজ্যে বাঙালিদের উপর অত্যাচার এবং বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলার প্রতিবাদে সরব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ নিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেন। একইসঙ্গে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলায় ফিরে আসার আহ্বান জানালেন তিনি। বললেন, ‘ভয় পাবেন না, বাংলায় ফিরে আসুন। সরকার আপনাদের পাশে আছে। কাজ, খাদ্য, শিক্ষা সব দেব।’
আরও পড়ুন: মনে রাখবেন আপনারা রাজ্য সরকারের চাকরি করেন, বোলপুরে BLOদের হুমকি মমতার
সোমবার বোলপুরের টুরিস্ট লজ মোড় থেকে ‘বাংলা ভাষা ও বাঙালি পরিচয়’ রক্ষায় দ্বিতীয় ভাষা আন্দোলনের সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে ছিলেন সাংসদ শতাব্দী রায়, মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, বিধায়ক অসিত মাল এবং তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। প্রায় চার কিলোমিটার পথজুড়ে মুখ্যমন্ত্রীর ভাষা সংরক্ষণের এই পদযাত্রায় জমায়েত ছিল চোখে পড়ার মতো। মিছিলের শুরুতেই হাতে ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি, বাংলা বর্ণমালা এবং প্রয়াত প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের গান ‘আমি বাংলায় গান গাই’। পদযাত্রা শেষে মঞ্চ থেকে মমতা একের পর কেন্দ্র, বিজেপি এবং নির্বাচন কমিশনকে নিশানা করেন।
মমতা বলেন, ‘বাংলা ভাষা বললেই অত্যাচার! বাংলাদেশি বলে সন্দেহ। কোথা থেকে এল এই সংস্কৃতি? আমার কখনও হিন্দিভাষাকে অসম্মান করিনি। তবে বাংলা বলার জন্য যদি নির্যাতন চলতেই থাকে, তবে তার জবাব বাংলার মাটি থেকেই আসবে।’ এসআইআর নিয়ে মমতা বলেন, এসআইআরের নামে বাঙালিদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। ভোটার লিস্ট থেকে নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে। আধার কার্ড, ভোটার কার্ড বা বাড়ির দলিল থাকলেও নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বাঙালিদের রোহিঙ্গা বলে চিহ্নিত করার অপচেষ্টা চলছে। এই পরিস্থিতিতে, পরিযায়ী শ্রমিকদের উদ্দেশে তাঁর আবেদন, ‘যাঁরা মহারাষ্ট্র, গুজরাট, রাজস্থান বা অন্যত্র কাজ করতে গিয়ে আজ নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন, তাঁরা ফিরে আসুন। বাংলা আপনাদের জন্য প্রস্তুত। পুলিশের হেল্পলাইন নম্বর আছে। কবে ফিরবেন জানালে, সরকার ট্রেনে করে আপনাদের ফিরিয়ে আনবে। নতুন স্কিম আসছে। এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে।’ তিনি আরও প্রতিশ্রুতি দেন, ‘ফিরে এলে কাজের সুযোগ তৈরি করব। ছেলে-মেয়েদের স্কুলে ভর্তি করানো হবে। বিনামূল্যে রেশন কার্ড দেওয়া হবে। কোনও অভাব হবে না।’
বক্তব্যের একপর্যায়ে আরও বিস্ফোরক হয়ে ওঠেন মমতা। বলেন, ‘এটা কী ভারতবর্ষ? আমি তো এই ভারতবর্ষকে চিনি না। পরিচয়হীন করে তোলার এই নীতিকে বাংলার মানুষ মেনে নেবে না।’ সাম্প্রতিক সময়ে হরিয়ানা, অসম, মহারাষ্ট্র-সহ বিভিন্ন রাজ্যে বাঙালি শ্রমিকদের উপর ভাষাগত ও জাতিগত বৈষম্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর কথায়, ‘ভাষার উপর সন্ত্রাস মেনে নেওয়া যায় না। বাংলা ভাষা আমাদের জীবন, আমাদের আত্মপরিচয়, আমাদের সংস্কৃতির মেরুদণ্ড। তার অপমান মানা হবে না।’