হাড়ভাঙা খাটুনির পর নিজের প্রাপ্যটুকু চাওয়াও কি অপরাধ? মুম্বইয়ের এক মর্মান্তিক ঘটনায় এই প্রশ্ন ফের উঠে এসেছে। দেশজুড়ে বিভিন্ন রাজ্যে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলাদেশি সন্দেহে পুলিশি হয়রানি যখন বাড়ছে, ঠিক তখনই মুম্বইয়ে এক পরিযায়ী শ্রমিকের উপর চরম নৃশংসতার অভিযোগ উঠল। পাওনা টাকা চাইতেই ঠিকাদারের লোকেরা তাঁর দুই কান কেটে দিয়েছে বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন: তামিলনাড়ুতে বাঙালি শ্রমিককে বাংলাদেশি সন্দেহে ২১ দিন ধরে আটক, উৎকণ্ঠায় পরিবার
আক্রান্ত শ্রমিকের নাম রাহুল সিং। তিনি বীরভূমের নলহাটি পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের রাজাপুকুরপাড়া এলাকার বাসিন্দা। সংসার চালানোর জন্য প্রায় পাঁচ-ছ’ মাস আগে তিনি মুম্বইয়ের মালাড এলাকায় একটি ঠিকাদারি সংস্থায় শ্রমিকের কাজে যোগ দেন। অভিযোগ, বাড়ি ফেরার আগে নিজের প্রাপ্য মজুরির প্রায় ২০ হাজার টাকা চেয়ে বসেন রাহুল। কিন্তু টাকা না দেওয়ায় স্থানীয় থানায় রাহুল ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান। এরপরই পরিস্থিতি ভয়াবহ মোড় নেয়। রাহুলের অভিযোগ, থানায় জানানোয় ঠিকাদারের তিন-চার জন সহযোগী তাঁকে ধরে নির্মমভাবে মারধর করে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর দুই কান কেটে দেয়। প্রচণ্ড যন্ত্রণার মধ্যেও কোনওমতে সেখান থেকে পালিয়ে কাছের এক হাসপাতালে চিকিৎসা নেন তিনি। তবে তাঁর ছিন্ন হওয়া কান দু’টি আর জোড়া লাগানো সম্ভব হয়নি। ঘটনার পর তিনি বীরভূমে নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন।
বর্তমানে রাহুলের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। তাঁর কথায়, ভয়ে কোনওমতে প্রাণ নিয়ে পালিয়েছে । ব্যাগে আধার কার্ড, ভোটার কার্ড সব ফেলে আসতে হয়েছে তাঁকে। মোবাইল আগেই কেড়ে নিয়েছিল তারা। ঘটনার পর থেকে ভীষণ চিন্তিত রাহুলের মা-ও। তিনি বলেন, পাঁচ-ছ’জন মিলে ছেলেকে এমন করে দিয়েছে। হাতে এক টাকাও নেই, কীভাবে চিকিৎসা করাবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না। এই ঘটনার পর বীরভূমের স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। ইতিমধ্যে একাধিক পরিযায়ী শ্রমিক সংগঠন দাবি করেছে, ভিনরাজ্যে বাঙালি শ্রমিকদের উপর এ ধরনের হামলা ও হেনস্তা রুখতে প্রশাসনকে দ্রুত ও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।