দিল্লি থেকে কলকাতায় এসেছিলেন ব্যবসায়িক বিরোধ মেটাতে। বিমানবন্দর থেকে বেরোনোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নিখোঁজ হয়ে যান। পরে জানা যায় তাঁকে অপহরণ করা হয়েছে। আর মুক্তিপণ বাবদ অপহরণকারীরা দাবি করছে এক কোটি টাকা। তদন্তে নেমে রাতারাতি অভিযান চালিয়ে অপহৃত ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করল পুলিশ। এই অপহরণের ঘটনায় নাম জড়িয়েছে দুই তৃণমূল নেতার। মোট তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে শাসন থানার পুলিশ। স্বরূপনগরের চারঘাট থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের নাম হল সাদ্দাম মণ্ডল, সজ্জন মণ্ডল ও জামালউদ্দিন মণ্ডল। (আরও পড়ুন: বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছিল ভারতীয়কে, পরে ভুল বুঝে ব্যক্তিকে দেশে ফেরাল BSF)
আরও পড়ুন: দিল্লি থেকে সুন্দরবনে বেড়াতে এসে অপহরণ, স্ত্রীর বুদ্ধিতে উদ্ধার স্বামী, ধৃত ২
জানা গিয়েছে, দিল্লির বাসিন্দা নাজিম চৌহান বসিরহাটের এক ব্যবসায়ী রাজু ওরফে জসিমউদ্দিন মণ্ডলের সঙ্গে যৌথভাবে হ্যাচারির ব্যবসা করতেন। সেই সম্পর্কের মধ্যে ছেদ পড়ে আর্থিক হিসাবনিকেশ নিয়ে। বিষয়টি মিটিয়ে নিতে কলকাতায় আসেন নাজিম। রবিবার সকালে রাজু নিজেই গাড়ি নিয়ে হাজির হন বিমানবন্দরে। গাড়িতে ওঠার পর, যখন তাঁরা সন্ডালিয়া রেলগেট পার হচ্ছিলেন, রাজু হঠাৎ শৌচকর্মের অজুহাতে গাড়ি থামায়। সঙ্গে সঙ্গে আরেকটি চারচাকা গাড়ি এসে দাঁড়ায় সামনে। সেই গাড়িতে রাজুক ও নাজিমকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এই দৃশ্য দেখে হতভম্ব হয়ে যান ক্যাব চালক মিরাজুল গাজি। তিনিই দ্রুত শাসন থানায় খবর দেন। (আরও পড়ুন: বকেয়া ডিএ না মিটিয়ে কি ফের আদালতে রাজ্য? মামলা নিয়ে সামনে এল বড় দাবি)
এদিকে, অপহরণের কিছুক্ষণের মধ্যেই নাজিমের পরিবারের কাছে ফোন যায়, চাওয়া হয় এক কোটি টাকা মুক্তিপণ। রাজু পরে ক্যাব চালককে ফোন করে জানায়, চিন্তার কিছু নেই, টাকা বুঝে পেলেই ছেড়ে দেব। পুলিশ নম্বর ট্র্যাক করে লোকেশন খুঁজে বের করে। অবশেষে সোমবার গভীর রাতে, স্বরূপনগরের চারঘাট এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে অপহৃতকে উদ্ধার করা হয়। আর গ্রেফতার করা হয় তিনজনকে। (আরও পড়ুন: BSF-এর জালে ২ হিন্দু সহ ৫ বাংলাদেশি, অনুপ্রবেশকারীদের ফেরানো হল নিজেদের দেশে)
তদন্তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ধৃত সাদ্দাম মণ্ডল হলেন তৃণমূলের চারঘাট অঞ্চলের সভাপতি, সজ্জনের স্ত্রী পঞ্চায়েত সদস্যা, আর জামালউদ্দিন একজন পরিচিত তৃণমূল কর্মী। রাজনৈতিক রং পেতেই অপহরণকাণ্ডে নতুন মাত্রা যোগ হয়। স্বরূপনগরের বিধায়ক বীণা মণ্ডল অবশ্য জানিয়েছেন, ধৃতরা দলে থাকলেও, তৃণমূল এই কাজ সমর্থন করে না। চক্রের মূল মাথা বলে সন্দেহ জসিমউদ্দিন ওরফে রাজুকে। পুলিশ মনে করছে, ব্যবসায়িক বিরোধ থেকেই এই অপহরণ পরিকল্পনা করা হয়।ধৃতদের মঙ্গলবার বারাসত আদালতে তোলা হলে বিচারক ২০ জুন পর্যন্ত তাঁদের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।