প্রাচীনকাল থেকেই নীলকণ্ঠ পাখি দুর্গাপুজোয় এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। মহাদেব শিবের আরেক নামে নামাঙ্কিত বাঙালির এই চিরপরিচিত পাখি। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই পাখির সঙ্গেই জড়িয়ে গিয়েছে নানা পৌরাণিক কাহিনি। যেমন এক কাহিনি অনুসারে, সমুদ্র মন্থনের সময় উঠে আসা বিষ পান করে শিবের কণ্ঠ নীল হয়ে গিয়েছিল, যার কারণে তিনি 'নীলকণ্ঠ' নামে পরিচিত হন। এই পাখির কণ্ঠও নীল হওয়ায় এর নাম শিবের নামের অনুসারী হয়ে নীলকণ্ঠ হয়েছে।
মায়ের আগমন বার্তা বয়ে আনে যে
প্রাচীনকাল থেকে নীলকণ্ঠ পাখিকে দেব-দেবীর বার্তা বাহক হিসেবে গণ্য করা হয়। দুর্গাপুজোর সময় বিশেষত বিজয়া দশমীর দিন প্রতিমা বিসর্জনের আগে এই পাখিকে উড়িয়ে দেওয়ার একটি প্রথা প্রচলিত ছিল। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, এই পাখি কৈলাসে মহাদাবের কাছে বার্তা নিয়ে যায় যে মা নিরাপদে ফিরে যাচ্ছেন তাঁর কাছে। এটি দেবীকে বিদায় জানানোর এবং তাঁর যাত্রা শুভ করার একটি প্রতীকী প্রথা।
আরও পড়ুন - টাকার ফোয়ারা উৎসবের মরসুমেই, প্রেমও জমে ক্ষীর! দেবীপক্ষে কপাল খুলবে এই ৫ রাশির
নীলকণ্ঠ দর্শনের অর্থ ও তাৎপর্য
নীলকণ্ঠ পাখির দর্শন অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। হিন্দু ধর্মানুসারে, এই পাখি শিব এবং দেবী দুর্গার সংযোগের প্রতীক। এই পাখিকে শুভ এবং কল্যাণের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। এর দর্শন নতুন কোনো শুভ কাজ শুরু করার ইঙ্গিত দেয়। শিবের সঙ্গে এর নাম জড়িত হওয়ায় এটি দেবত্ব এবং পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। আবার, এটি দুর্গাপুজোর সমাপ্তি এবং দেবীর কৈলাসে প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। এর উড়ানকে দেবীর কৈলাসের দিকে যাত্রা হিসেবে ধরা হয়।
আরও পড়ুন - মাইনের টাকা ধরে রাখতে পারছেন না? মানিব্যাগের দোষ কাটাতে রাখুন এই ৫ বস্তু
বর্তমানে নিষিদ্ধ যে প্রথা
তবে, বর্তমানে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী এই পাখিকে ধরে রাখা বা উড়িয়ে দেওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই এই ঐতিহ্য এখন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় এই প্রথাটি শুধুমাত্র প্রতীকী রূপেই পালন করা হয়, পাখি ব্যবহার না করে। নীলকণ্ঠ পাখি প্রকৃতি এবং ধর্মীয় ঐতিহ্যের এক সুন্দর মেলবন্ধন, যা আমাদের সংস্কৃতিতে এক গভীর অর্থ বহন করে। এটি শুধুমাত্র একটি পাখি নয়, বরং বিশ্বাস, ভক্তি এবং এক ঐশ্বরিক যাত্রার প্রতীক।