রবিবার থেকে নতুন করে বিশ্ব রাজনীতির মানচিত্রে চরম উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু কেন্দ্র ফরডো, নাতান্জ এবং ইসফাহানে-মার্কিন সামরিক বাহিনীর যুদ্ধবিমান হামলা চালিয়েছে।আর এই আবহে ইরান পরিস্থিতি নিয়ে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি খসড়া প্রস্তাব জমা দিয়েছে রাশিয়া, চিন এবং পাকিস্তান। খসড়া প্রস্তাবে বিনা শর্তে, এখনই সংঘর্ষ বিরতির পক্ষে সওয়াল করা হয়েছে।
নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে এই খসড়া প্রস্তাবটির ভোটাভুটি হয়নি। এটি এখনও একটি খসড়া হিসেবেই রয়েছে এবং ভোটাভুটির জন্য নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে এটি বিতরণ করতে হবে।
পাকিস্তান
ইরান-ইজরায়েলের সংঘাতে ইরানের পাশেই ছিল পাকিস্তান।এবার সরাসরি ইরান-ইজরায়েলের সংঘাতে মেগা এন্ট্রি নিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। শনিবারই শান্তির নোবেলের জন্য নাম ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম প্রস্তাব করেছিল পাকিস্তান। কিন্তু পরের দিনই ইরানের উপর বোমা ফেলার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টকে তুলোধোনা করেছে শাহবাজ শরিফের দেশ। পাক বিদেশমন্ত্রীর তরফে বিবৃতি দিয়ে মার্কিন আচরণের তীব্র নিন্দা করা হয়েছে। পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রক সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে লিখেছে,'এয়ারস্ট্রাইক চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সমস্ত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে। রাষ্ট্রসংঘের নীতি অনুযায়ী ইরানের আত্মরক্ষার অধিকার আছে।' শুধু তাই নয় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের ফোনে কথা বলেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রবিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ এবং প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানের মধ্যে ফোনালাপ হয়েছে। শাহবাজ মার্কিন হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। গত আট দিনে ইজরায়েলের অযাচিত ও অযৌক্তিক আগ্রাসনের ধারাবাহিক ঘটনা হিসেবে এ হামলাকে চিহ্নিত করেন তিনি। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করে শেহবাজ বলেন, তেহরানের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে এবং তিনি অবিলম্বে সংলাপ ও কূটনীতিতে ফিরে আসার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। এমনকি সংঘাত বন্ধে এটিকে একমাত্র কার্যকর পথ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
রাশিয়া
নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ইরানের ওপর ইজরায়েলের হামলার তীব্র সমালোচনা করেছে রাশিয়া। রাষ্ট্রসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, 'এটি কেবল হাজার হাজার প্যালেস্টাইনি মহিলা, শিশু এবং বৃদ্ধদের হত্যাকাণ্ডের প্রতি চোখ বন্ধ রাখার জন্যই প্রস্তুত নয়, বরং গোটা মানবতার নিরাপত্তা এবং কল্যাণ নিয়েও জুয়া খেলছে যুক্তরাষ্ট্র।' নেবেনজিয়া সতর্ক করে বলেন, ‘ইরানে তাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দিয়েছে-যার ফল কী হবে, তা কেউ জানে না। এই বাক্স থেকে নতুন বিপর্যয় ও দুর্ভোগ আসতে পারে।’
অন্যদিকে রুশ বিদেশমন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছে, 'ইরানের উপর মার্কিন হামলার কড়া নিন্দা করছি। দায়িত্বজ্ঞানহীন এই হামলা আসলে আন্তর্জাতিক আইনের ঘোরতর বিরোধী। মার্কিন হামলার পরে অশান্ত পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। তার জেরে ওই এলাকা-সহ গোটা বিশ্বের সুরক্ষা বিঘ্নিত হতে পারে।'
চিন
ইরানে হামলার পরেই 'বন্ধু' চিনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে।রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে চিনের প্রতিনিধি ফু কং বলেন, 'চিন ইরানের ওপর মার্কিন হামলা এবং পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলার তীব্র নিন্দা জানায়। আমরা অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছি। পক্ষগুলির উচিত বলপ্রয়োগের প্রবণতাকে সংযত করা, সংঘাতকে আরও তীব্র করা এবং আগুনে ঘি ঢালা এড়ানো।’ তিনি বলেন,'বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার ঝুঁকি নিয়ে চিন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।পরিস্থিতি যাতে আরও খারাপ না হয় এবং যুদ্ধের প্রভাব এড়াতে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি করা উচিত।' এরই সঙ্গে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের 'বিশ্বাসযোগ্যতা' নিয়ে প্রশ্ন উস্কে দিয়েছেন।
এর আগে চিনা বিদেশমন্ত্রকের ওয়েবসাইটে লেখা হয়েছে, আইএইএ-র নজরদারিতে থাকা পারমাণবিক ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তার জেরে মধ্যপ্রাচ্যে সঙ্ঘাতের পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। দ্রুত আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটাক ইজরায়েল, এমনটাও বলা হয়েছে বেজিংয়ের তরফ থেকে।
আফগানিস্তান
আফগানিস্তানের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র আবদুল কাহার বলখিও মার্কিন হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন।এক্স পোস্টে তিনি বলেন, 'ইজরায়েলি সরকারের হামলার ধারাবাহিকতায় আফগানিস্তানের ইসলামিক আমিরাতের বিদেশ মন্ত্রক ইরানের ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের পারমাণবিক স্থাপনাগুলিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হামলার নিন্দা জানায় এবং এই অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান অস্থিতিশীলতার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে।