'আমাকে বাঁচাও।' গভীর রাতে প্রেমিককে ইনস্টাগ্রামে মেসেজ পাঠিয়েছিলেন এক তরুণী। আর তার পরদিনই বাড়ি থেকে দেহ তরুণীর মৃতদেহ উদ্ধারে শোরগোল পড়ে গিয়েছে গুজরাটে।প্রথমে আত্মহত্যা বলে প্রচার করা হলেও, পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে হাড়হিম করা খুনের ঘটনা। অভিযোগের আঙুল উঠেছে তরুণীর বাবা ও কাকার দিকে। পুলিশ মনে করছে, ‘সম্মানরক্ষার্থে’ খুন করা হয়েছে ওই তরুণীকে।
পুলিশ সূত্রে খবর, নিহত তরুণীর নাম চন্দ্রিকা চৌধুরী (১৮)।বাবা সেধাভাই প্যাটেল এবং কাকা শিবভাই প্যাটেলের বিরুদ্ধে ওই তরুণীকে খুনের অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় চন্দ্রিকার কাকা-সহ দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু মূল অভিযুক্ত তরুণীর বাবা পলাতক।প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, প্রেমিক হরিশ চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক মানতে নারাজ ছিলেন পরিবারের লোকজন। তাঁরা চাইছিলেন চন্দ্রিকার বিয়ে অন্যত্র দিতে। কিন্তু তরুণী সেই বিয়েতে রাজি ছিল না। তাঁকে পরিবারের লোকজন মেরে দিতে পারে, একথা আগেই প্রেমিককে জানিয়েছিলেন তিনি।গত ২৪ জুন গভীর রাতে হরিশকে ইনস্টাগ্রামে তরুণী জানান, 'আমায় নিয়ে যাও, নয়তো বাড়ির লোক জোর করে বিয়ে দেবে। বিয়েতে রাজি না হলে মেরে ফেলবে। বাঁচাও আমাকে।' তার কয়েক ঘণ্টা পরই দান্তিয়া গ্রামের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় তরুণীর দেহ। প্রথমে আত্মহত্যার খবর ছড়ালেও, পরে পুলিশে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন হরিশ।
আরও পড়ুন-কারেন্ট চলে যাওয়ায় ‘চপ্পল’ প্রতিবাদ, বিধায়ক মিছিলের মধ্যেই গায়েব হল প্রচুর জুতো
বানাসকাঁঠার সহকারী পুলিশ সুপার সুমন নালা জানান, প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে যে, এটি পরিকল্পিত খুন। তরুণীর বাবা এবং কাকা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত। চন্দ্রিকার মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। মৃত্যুর পর ডাক্তার দেখানো হয়নি, তড়িঘড়ি দেহ দাহ করে দেওয়া হয়। পরিবারের ঘনিষ্ঠ কাউকে খবর দেওয়া হয়নি, পালানপুরে পড়াশোনা করা ভাই পর্যন্ত কিছু জানতে পারেনি। এতে পুলিশের সন্দেহ আরও বাড়ে। তিনি আরও বলেন, খুনের কয়েকদিন আগে হরিশের সঙ্গে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন চন্দ্রিকা। সেই সময় তাঁর পরিবার থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেছিলেন। পুলিশ চন্দ্রিকা খুঁজে বের করে বাড়িতে পাঠায়।কিন্তু ২৪ জুন রাতে যদি চন্দ্রিকা বিয়েতে রাজি না হয়, তবে তাঁকে খুন করার ছক কষেছিলেন বাবা সেধাভাই প্যাটেল ও কাকা শিবাভাই প্যাটেল।অন্যদিকে, চন্দ্রিকার থেকে বার্তা পেয়ে ভয় পেয়ে যান হরিশ। তিনি আশঙ্কা করেন, তাঁর প্রেমিকাকে খুন করা হতে পারে। তিনি আদালতে হেবিয়াস পিটিশন দাখিল করেন। শুনানির আগেই জানা যায়, মৃত্যু হয়েছে চন্দ্রিকার। তাঁর পরিবার মৃত্যু শংসাপত্র জমা দিয়ে জানায়, স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে তাঁদের মেয়ের। কিন্তু, হরিশের সন্দেহ হয়। তিনি পুলিশের কাছে তদন্তের আবেদন জানান।
আরও পড়ুন-কারেন্ট চলে যাওয়ায় ‘চপ্পল’ প্রতিবাদ, বিধায়ক মিছিলের মধ্যেই গায়েব হল প্রচুর জুতো
পুলিশের দাবি, তিন ধাপে তরুণীকে খুনের পরিকল্পনা কার্যকর করা হয়।এএসপি নালা বলেন, 'পরিকল্পনা করেই ওই তরুণীকে খুন করা হয়েছে। চন্দ্রিকার বাবা ও কাকা এই খুনের পরিকল্পনা করেন। প্রথমে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করা হয় চন্দ্রিকাকে। তারপর শ্বাসরোধ করে খুন করে দেহ ঝুলিয়ে দেওয়া হয় যাতে আত্মহত্যা বলে মনে হয়। রাতে চন্দ্রিকাকে যাঁরা ঝুলতে দেখেছিলেন, তাঁরা এটাকে আত্মহত্যা বলেই মনে করেছিলেন। সকালে তাঁরা অন্যদের বলেন, স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে চন্দ্রিকার।' প্রযুক্তিগত তথ্য, পরিস্থিতিগত প্রমাণ এবং বয়ান বিশ্লেষণ করে পুলিশ নিশ্চিত হয়, এটি একটি ‘পরিকল্পিত ও সাজানো খুন’। থানারদ থানায় খুনের মামলা দায়ের হয়। চন্দ্রিকার কাকা-সহ দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাবা এখনও পলাতক।