মাথার দাম ছিল ১ কোটি টাকা। দীর্ঘ চার দশকের সশস্ত্র লড়াই শেষে আত্মসমর্পণ করলেন সেই মাওবাদী নেত্রী তথা কিষেণজির স্ত্রী সুজাতা। সূত্রের খবর, তেলাঙ্গানার গাদওয়াল জেলায় তিন মহিলা সঙ্গীকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশের কাছে ধরা দিয়েছেন তিনি। গাদওয়াল অঞ্চলের বাসিন্দা সুজাতা খুব অল্প বয়সেই বিপ্লবের পথ বেছে নিয়েছিলেন। ১৯৮৪ সালে তিনি প্রবীণ মাওবাদী নেতা মালোজুলা কোটেশ্বর রাও ওরফে কিষেণজিকে বিয়ে করেছিলেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, তেলাঙ্গানার গাদওয়ালের মেয়ে সুজাতার বিপ্লবে হাতেখড়ি হয়েছিল তুতো ভাই প্যাটেল সুধাকর রেড্ডির হাত ধরে। ২০০৯ সালে সুধাকরের মৃত্যু হলেও, সেই পথেই এগিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সুজাতা মাওবাদী পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। তিনি প্রথম প্রজন্মের সেই মাওবাদীদের একজন, যারা দণ্ডকারণ্যে গেরিলা অঞ্চল গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে কাজ শুরু করেন। তার ভাইপো প্যাটেল সুধাকর রেড্ডি আরেকজন বিশিষ্ট মাওবাদী নেতা ছিলেন এবং ২০০৯ সালে নিহত হন।সুজাতার মাথার দাম ছিল ১ কোটি টাকা, এবং তিনি মাওবাদী আন্দোলনের অন্যতম প্রভাবশালী ও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা নেত্রী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার আত্মসমর্পণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য একটি বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। তিনি মাওবাদী ঘনিষ্ঠ প্রয়াত কবি ও কর্মী গদ্দারের সঙ্গেও কাজ করেছেন। মাওবাদী আন্দোলনের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক দিকেও তার অবদান ছিল।তাঁকে মোস্ট-ওয়ান্টেড নেতাদের একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি ‘ময়না’ ছদ্মনামে তেলেগু পত্রিকায় গল্প লিখতেন। মানুষ সুজাতাকে ময়নাক্কা নামেও চেনে। তিনি সর্বশেষ ছত্তিশগড় দক্ষিণ সাব জোনাল ব্যুরোর দায়িত্বে ছিলেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে ১০৬টি মামলা রয়েছে।
ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য
২০০৮ সালের ২ নভেম্বর শালবনিতে জিন্দলদের ইস্পাত প্রকল্পের শিলান্যাস অনুষ্ঠান সেরে সড়ক পথে মেদিনীপুরে ফেরার পথে ভাদুতলায় ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে মাওবাদীদের ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণের মুখে পড়েন পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য-সহ দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। অল্পের জন্য রক্ষা পান তাঁরা। এর কয়েকদিন পরেই পুলিশি অত্যাচারের অভিযোগে ওই বছরের ৮ নভেম্বর থেকে জঙ্গলমহলে গড়ে ওঠে পুলিশি সন্ত্রাসবিরোধী জনসাধারণের কমিটি। রাস্তা কেটে জঙ্গলমহল কার্যত অবরুদ্ধ করে শুরু হয় আন্দোলন। ২০০৯ সালের গোড়ায় ওই আন্দোলনের চালিকাশক্তি হিসেবে প্রকাশ্যে আসে মাওবাদীরা। সে সময় লালগড়ের ধরমপুরের জঙ্গলে দাঁড়িয়ে জঙ্গলমহল 'দখল' করার কথা স্বীকার করেন মাওবাদী নেতা কিষেণজি। সূত্রের খবর, এই সময় থেকেই দলে ক্রমশই প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন কিষেণজির স্ত্রী সুজাতা।
২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে এক এনকাউন্টারে কিষেণজি নিহত হন। এরপর থেকেই দলে সক্রিয় হয়ে ওঠেন সুজাতা।জানা যায়, তিনি সব সময় একে-৪৭ নিয়ে ঘুরতেন।গোয়েন্দারা বলছেন, তিনি মাওবাদী আন্দোলনের প্রথম প্রজন্মের অন্যতম মুখ। ফলে তাঁর ধরা পড়া মাওবাদী নেটওয়ার্কে বড় ধাক্কা দেবে বলেই আশা।বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, সুজাতার আত্মসমর্পণ শুধু নিরাপত্তা বাহিনীর সাফল্য নয়, বরং প্রতীকী অর্থেও তা বড় তাৎপর্য বহন করছে।
উল্লেখ্য, ২০২৬ সালের মার্চ মাসের মধ্যে মাওবাদমুক্ত ভারত গড়ার বার্তা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এরপর থেকেই ছত্তিশগড়, অন্ধ্রপ্রদেশ, ঝড়খণ্ডের মতো মাওবাদী অধ্যুষিত রাজ্যগুলিতে মাওবিরোধী অভিযান ব্যাপক গতি পেয়েছে।বিশেষ করে ছত্তিশগড়–তেলাঙ্গানা সীমান্তের কারেগুট্টা পাহাড়ি অঞ্চলকে এখনও মাওবাদীদের অন্যতম ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত করছে গোয়েন্দারা।