দিল্লির বহুচর্চিত বিএমডব্লিউ দুর্ঘটনায় অভিযুক্ত মহিলা চালক গগনপ্রীত কৌরের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। আর মেডিক্যাল রিপোর্টে স্পষ্ট, দুর্ঘটনার সময় তিনি মদ্যপ ছিলেন না।অর্থাৎ মদ খেয়ে গাড়ি চালানোর অভিযোগ থেকে আপাতত মুক্তি পেলেন তিনি। যদিও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের উপসচিব নবত্যোজ সিংয়ের মৃত্যু এবং তাঁর স্ত্রী সন্দীপ কৌরর আশঙ্কাজনক আহত হওয়ার অভিযোগ এখনও উঠে যায়নি।
ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার দুপুর প্রায় দু’টো নাগাদ, রাজধানীর ঢৌলা কুয়াঁ এলাকায়। বিএমডব্লিউ-র ধাক্কায় উল্টে গিয়েছিল একটি দু’চাকার গাড়ি। মৃত্যু হয় ৫২ বছরের নবত্যোজ সিং অর্থমন্ত্রকের কর্মী ছিলেন। তাঁর স্ত্রী সন্দীপ কৌর গুরুতর জখম হন। শরীরের একাধিক হাড় ভেঙে যায়, মাথায়ও আঘাত লাগে। দুর্ঘটনার অভিঘাতে বাইকটি এক পাশে থাকা বাসেও গিয়ে ধাক্কা খায়। পুলিশ সূত্রে খবর, গগনপ্রীত কৌর ছিলেন গাড়ির চালকের আসনে। তাঁর সঙ্গে গাড়িতে ছিলেন স্বামী পারিক্ষত মাক্কার। তাঁর স্বামীও আহত হয়েছিলেন, যদিও মঙ্গলবার তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনার পর সোমবার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর গগনপ্রীতকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে আদালত তাঁকে দু’দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠায়।
আরও পড়ুন-বাড়িতে বান্ডিল বান্ডিল নোট, গয়না! পুলিশের জালে অসম সিভিল সার্ভিস অফিসার
জানা গিয়েছে, রবিবার সকালে নভজ্যোত এবং তাঁর স্ত্রী সন্দীপ কৌর বাইকে চেপে বাংলা সাহিব গুরুদ্বার থেকে বাড়ি ফিরছিলেন।মাঝে তাঁরা কর্ণাটক ভবনে দুপুরের খাবার খেতে গিয়েছিলেন। দুপুর ১টা ১৫ মিনিট নাগাদ তাঁরা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। মাঝপথে দিল্লি ক্যান্টনমেন্ট মেট্রো স্টেশনের কাছে পিছন থেকে একটি বিএমডব্লিউ গাড়ি এসে ধাক্কা মারে তাঁদের। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় নভজ্যোতের। গুরুতর আহত হন তাঁর স্ত্রী সন্দীপ কৌর। নভজ্যোত ও সন্দীপের ছেলে নভনুর জানান, দুর্ঘটনার সময়ে ওই বিএমডব্লিউ এক্স৫ গাড়িটি এক মহিলা চালাচ্ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরাও জানান, গাড়ি চালাচ্ছিলেন এক মহিলা। দুর্ঘটনার পরে নভজ্যোতের বাইক রাস্তার ধারে একটি ডিভাইডারে ধাক্কা মারে।দুর্ঘটনার পরে গগনপ্রীত এবং তাঁর স্বামীই একটি ট্যাক্সিতে করে নভজ্যোত এবং সন্দীপকে জিটি বি নগরের নুলাইফ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই ওই কেন্দ্রীয় সরকারি আধিকারিককে মৃত ঘোষণা করা হয়। তাঁর স্ত্রী ওই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, দুর্ঘটনাস্থলের কাছেই এইমস বা সফদরজং হাসপাতাল থাকতেও ১৯ কিলোমিটার দূরের জিটি বি নগরের হাসপাতালে কেন নিয়ে যাওয়া হল? নিহত আধিকারিকের ছেলের দাবি, ঘটনাস্থলের কাছের কোনও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে হয়তো বাঁচানো সম্ভব হত নভজ্যোতকে। বারবার প্রশ্ন করা সত্ত্বেও তাঁর বাবাকে ওই হাসপাতালে কে এনেছে সেই নাম জানাতে অস্বীকার করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপরেই ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছেন তিনি। সূত্রের খবর, ওই হাসপাতাল অভিযুক্ত গগনপ্রীতের বাবার।
আরও পড়ুন-বাড়িতে বান্ডিল বান্ডিল নোট, গয়না! পুলিশের জালে অসম সিভিল সার্ভিস অফিসার
মামলায় ক্রমে যুক্ত হয়েছে একাধিক ধারা। ভারতীয় ন্যায় সংহিতা অনুযায়ী গগনপ্রীতের বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে ১০৫ নম্বর ধারা (অপরাধমূলক হত্যাকাণ্ড, যা খুন নয়), ১২৫বি (অন্যের জীবন বা নিরাপত্তা বিপন্ন করার কাজ), ২৮১ (বেপরোয়া গাড়ি চালানো) এবং ২৩৮ (অপরাধ লুকোতে প্রমাণ নষ্ট করা বা ভুয়ো তথ্য দেওয়া)।ঘটনায় এখনও তদন্ত চলছে। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, গাড়িটি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ হারাল এবং কেন আহতদের নিয়ে দূরের হাসপাতালে যাওয়া হল, সেসব খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।