'নেপালের মানুষের শান্তি, অগ্রগতি এবং সমৃদ্ধির প্রতি ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।' নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সুশীলা কার্কিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুক্রবার রাত সোয়া ন'টা নাগাদ রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন শীতল নিবাসে সুশীলা কার্কিকে শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পাওদেল। অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়ে ইতিহাস গড়েছেন সুশীলা। তিনিই হলেন নেপালের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী। নেপালের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সুশীলা দায়িত্ব গ্রহণের পরেই নেপালের শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রতি ভারতের সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
শনিবার এক্স বার্তায় হিন্দি ও নেপালি ভাষায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লিখেছেন, ‘নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করায় সুশীলা কার্কিকে আন্তরিক অভিনন্দন। নেপালের মানুষের শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য ভারত সর্বদা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে।’ ভারতের বিদেশ মন্ত্রকও নেপালে নতুন অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে। তাদের বক্তব্য, এই সরকার শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে বলেই আশা করছে নয়া দিল্লি। বলে রাখা ভালো, ভারত ও নেপালের মধ্যে ১,৭৫১ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে (ভারতের ৫টি রাজ্য সিকিম, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তরপ্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডজুড়ে)। ধর্ম, ভাষা এবং সংস্কৃতির মিলের মাধ্যমে উভয় দেশের সম্পর্ক স্পষ্ট হয়ে ওঠে।২০১৪ সালের মে মাস থেকে, প্রধানমন্ত্রী মোদী পাঁচবার নেপাল সফর করেছেন এবং ২০১৪ সালের মে মাস থেকে নেপালের প্রধানমন্ত্রীরা দশবার ভারত সফর করেছেন।
নেপালের নতুন অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি শপথ নেওয়ার কয়েক ঘন্টা পরেই শুক্রবার গভীর রাতে সংসদ আনুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে দেওয়া হয় এবং ৫ মার্চ, ২০২৬ তারিখে নতুন নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। দীর্ঘ সহিংসতার জেরে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি পদত্যাগ করতেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রয়োজন দেখা দেয়। রাষ্ট্রপতি, সেনাপ্রধান, রাজনৈতিক নেতারা এবং ‘জেন জি’ নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভকারীদের সম্মতিতেই নিরপেক্ষ মুখ হিসেবে কার্কির নাম প্রস্তাবিত হয়। এই মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর সুশীলা কার্কির সামনে রয়েছে বড় দায়িত্ব- অশান্ত দেশে আইনশৃঙ্খলা ফেরানো, সাম্প্রতিক সহিংসতায় প্রাণহানির তদন্ত করা এবং নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন সম্পন্ন করা। নেপালের সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ বিক্ষোভে অন্তত ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে এক ভারতীয় নাগরিকও রয়েছেন। আহত হয়েছেন হাজারেরও বেশি মানুষ। সংসদ-সহ একাধিক সরকারি ভবন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যা নিয়ে জনমানসে ক্ষোভ রয়েছে।
৭৩ বছরের সুশীলা কার্কি ২০১৬ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত নেপালের প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব সামলেছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানের জন্য তিনি পরিচিত। এছাড়া তাঁর ভারতের সঙ্গেও বিশেষ যোগ রয়েছে। ১৯৭৫ সালে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেন এবং প্রথম স্থানাধিকারী ছিলেন।