নেপালের কাঠমান্ডুর রাস্তায় আন্দোলনের দৃশ্য এখনও চোখে ভাসে। দুর্নীতি ও রাজবংশবাদের বিরুদ্ধে 'জেন জি'দের তীব্র প্রতিবাদে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠে প্রতিবেশী দেশ। আর সেই আন্দোলনকে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করে লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী ভারতের যুবক ভোটার ও 'জেন জি'কে দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের বাহক হিসেবে তুলে ধরেন। এরপরেই জাতীয় রাজনীতিতে বিতর্কের ঝড় উঠেছে।
কী বলেছেন রাহুল গান্ধী?
বৃহস্পতিবার এক্স বার্তায় কংগ্রেস নেতা বলেন, 'দেশের যুব, দেশের ছাত্রছাত্রী এবং দেশের জেন জি সংবিধান রক্ষা করবে, গণতন্ত্রকে বাঁচাবে এবং ভোট চুরি রুখবে। আমি সব সময় তাদের পাশে থাকব। জয় হিন্দ!' যদিও তিনি নেপালের কথা সরাসরি উল্লেখ করেননি, 'জেন জি' শব্দ নিয়ে রাহুলের তীব্র সমালোচনা করেছে বিজেপি।সম্প্রতি নেপালে 'জেন জি'র বিক্ষোভের জেরে পতন হয়েছে সে দেশের সরকারের। এসেছে তাদের পছন্দের অন্তর্বর্তী সরকার। তার আগে বাংলাদেশেও যুব বিক্ষোভের গদি হারাতে হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। পরিসংখ্যা বলছে, রাহুল গান্ধী যে 'জেন জেড' ভোটারদের আকর্ষণ করতে চাইছেন, তারা এখনও প্রধানত বিজেপি ও এনডিএর পাশে রয়েছে। ২০২৪ সালের নির্বাচনে যুব ভোটের প্রায় ৪১ শতাংশ এনডিএর হাতে ছিল। যুবক-কর্মসংস্থান, দক্ষতা উন্নয়ন ও শিক্ষায় সরকারের মনোযোগ থাকায় বিজেপি আত্মবিশ্বাসী যে এই সমর্থন সহজে সরে যাবে না।
নিশিকান্ত দুবের কড়া প্রতিক্রিয়া
রাহুল গান্ধীর মন্তব্যের করা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্টে নিশিকান্ত দুবে লিখেছেন, ‘জেন জি স্বজনপোষণ ও বংশ পরম্পরায় শাসনের বিরুদ্ধে। নেহরুজি, ইন্দিরাজি, রাজীবজি, সনিয়াজি-র পরে রাহুলজিকে তাঁরা সহ্য করবে কেন? জেন জি দুর্নীতি বিরোধী। তারা তোমাদের কেন তাড়াবে না?' তিনি আরও লেখেন, ‘জেন জি বাংলাদেশকে ইসলামিক রাষ্ট্র, নেপালকে হিন্দু রাষ্ট্র করেছে, ওরা ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র করবে না কেন? ওরা আসছে, দেশ ছাড়ার জন্য তৈরি হও।’ রাজনৈতিক মহলের মতে, দুবের এই পোস্ট আসলে তরুণদের বিজেপির দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার চেষ্টা।
অন্যদিকে, সমাজবাদী পার্টির নেতা আইপি সিং কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীর বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন। এক্স পোস্টে তিনি লেখেন, 'দেশের গণতন্ত্র রক্ষার জন্য, এখন জেন জি বিপ্লবের প্রয়োজন, দেশের যুবসমাজ তাদের অধিকারের জন্য জাগ্রত হচ্ছে।' গত ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ৭৫তম জন্মদিন উদযাপনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'গতকাল, জন্মদিনে যেভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা ধাপে ধাপে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তার উপর কড়া নজর ছিল দেশের বেকার যুবকদের। এর হিসাব নেওয়া হবে।এই টাকা দেশের, কারো বাবার উপার্জন করা নয়।'
এদিকে দিল্লিতে এক সাংবাদিক বৈঠকে রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেন, ২০২৩ সালের নির্বাচনে কর্ণাটকের আলন্দ বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ৬,০১৮টি ভোট মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল। তাঁর কথায়, 'আলন্দ একটি বিধানসভা কেন্দ্র। এখানে ৬,০১৮ ভোট মুছে ফেলার চেষ্টা হয়। প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি, কিন্তু কাকতালীয়ভাবে এই অংশটি ধরা পড়ে।'তিনি জানান, এই অনিয়ম ধরা পড়ে এক বুথ-স্তরের কর্মীর মাধ্যমে। ওই কর্মীর নিজের কাকার নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ে যায়। তখন তিনি অনুসন্ধান করে দেখেন, তার নাম নাকি পাশের বাড়ির প্রতিবেশী মুছে দিয়েছেন। কিন্তু প্রতিবেশী পরে জানান, তিনি কিছুই জানেন না। যদিও কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর অভিযোগের জবাব দিয়ে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ভোটার তালিকা থেকে নাম মুছে ফেলার জন্য যে ৬,০১৮টি অনলাইন আবেদন জমা পড়েছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বরে, তারমধ্যে তদন্তে মাত্র ২৪টি অভিযোগই সঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছে। বাকি ৫,৯৯৪টি আবেদনই ভুয়ো বা ভিত্তিহীন।