দুর্গাপুজো ঘিরে প্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত নানা প্রথা। তারই অন্যতম বীরাষ্টমী। দুর্গাপূজার একটি বিশেষ প্রথা পালিত হয় মহাষ্টমীর দিন। মায়ের পুজোর পাশাপাশি এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে বাঙালি সমাজের জয়গাথা। পৌরাণিক ব্যাখ্যা রয়েছে এই বিশেষ ব্রতের। তবে দীর্ঘদিন ধরে পালিত হতে হতে বাংলার বীরত্ব ও দেশাত্মবোধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে গিয়েছে বীরাষ্টমী।
বীরাষ্টমীর পৌরাণিক গুরুত্ব
বীরাষ্টমীর সঙ্গে জড়িয়ে আছে মায়ের রণসজ্জার কাহিনি। কিত আছে, এই দিনে দেবী দুর্গা মহিষাসুরের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য রণসাজে সজ্জিত হন। দেবগণ একে একে তাঁকে বিবিধ অস্ত্র ও অলঙ্কারে ভূষিত করতে থাকেন। মায়ের রণসাজে সজ্জার এই বিশেষ দিনটিকেই বীরাষ্টমী বলা হয়।
ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে এই ব্রত
বাংলা তথা ভারতের ইতিহাসে নানা মুহূর্তে আদি ধর্মীয় প্রথা দেখা দিয়েছিল বড় হয়ে। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধেও নানা সময় এমন সব প্রথা স্বদেশিয়ানার প্রতীক হয়ে ওঠে। প্রতীক হয়ে ওঠে ভারতীয়ত্বের। এই প্রেক্ষাপটে বীরাষ্টমীর গুরুত্ব আরও উজ্জ্বল। ইতিহাস বলছে, ব্রিটিশ আমলে স্বাধীনতা আন্দোলন চলাকালীন অনেক বিপ্লবী বীরাষ্টমী উৎসবকে দেশপ্রেম এবং শারীরিক শক্তির প্রদর্শনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতেন। এই দিনে লাঠিখেলা, ছোরা খেলা এবং অন্যান্য শারীরিক কসরতের আয়োজন করা হতো। ব্রিটিশদের মনে বাঙালিদের নিয়ে থাকা দুর্বলতার ধারণাকে ভেঙে দেওয়ার ব্যাপারে এটি একটি বড় প্রচেষ্টা হয়ে দাঁড়ায়।
আরও পড়ুন - কলকাতা বিমানবন্দরে কর্তৃপক্ষের বিশ্বকর্মা পুজো, কেমন হল? দেখে নিন এক ঝলক
আজও অমলিন যে ঐতিহ্য
আজও কলকাতার কিছু ঐতিহ্যবাহী পুজোয়, যেমন বাগবাজার সর্বজনীন দুর্গোৎসবে, মহাষ্টমীর দিনে এই বীরাষ্টমী প্রথা পালিত হয়। এখানে আজও শারীরিক কসরত, কুস্তি এবং অস্ত্রের পুজো করা হয়। তবে আগের তুলনায় কমেছে জাঁকজমক, কমেছে ব্রতের ব্যাপ্তি। গ্রামাঞ্চলে প্রায় অবলুপ্ত একদা স্বদেশি শক্তির প্রতীক এই ধর্মীয় ব্রত।
আরও পড়ুন - সাদা থান পরে নবপত্রিকা, এই পুজোয় লক্ষ্মী-সরস্বতীর বদলে মায়ের সঙ্গী জয়া-বিজয়া
বীরাষ্টমী ব্রত পালন
শুধু ইতিহাসে নয়, ধর্মবিশ্বাসের নিরিখেও বীরাষ্টমীর খ্যাতি ছিল ব্যাপক। আদি ও মধ্যযুগের বাংলায় অনেক মহিলা বীর সন্তান লাভের জন্য এই বীরাষ্টমী ব্রত পালন করেন। আশ্বিন মাসের শুক্লা অষ্টমীতে এই ব্রত রাখা হত। আট বছর ধরে পালন করতে হত ব্রত। তবে এখন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ব্রত পালনও কমে এসেছে।