ফরাসি উপকূল থেকে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে আসা অভিবাসীদের ফ্রান্সে ফেরত পাঠাচ্ছে ব্রিটেন। দুই দেশের মধ্যে চলতি বছরের জুলাইয়ে স্বাক্ষরিত ‘ওয়ান ইন, ওয়ান আউট’ চুক্তির আওতায় গত বুধবার থেকে অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিবিসি এবং টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্রিটেন থেকে প্রথম যে ব্যক্তিকে নির্বাসিত করা হয়েছেন, তিনি একজন ভারতীয় নাগরিক।তবে ফরাসি কর্মকর্তারা ওই ব্যক্তির নাগরিকত্বের বিশদ বিবরণ জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। আর এই নির্বাসনের পরেই বিশেষ ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ।
ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ বলেন, এই বহিষ্কার একটি 'বার্তা' দিয়েছে। তাঁর কথায়, 'আমাদের সীমান্ত সুরক্ষিত করার জন্য এটি প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি ছোট নৌকায় করে পারাপার হওয়া মানুষদের কাছে একটি বার্তা দিয়েছে; যদি আপনি অবৈধভাবে ব্রিটেনে প্রবেশ করেন, তাহলে আমরা আপনাকে নির্বাসনের চেষ্টা করব।' সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার সকালে এয়ার ফ্রান্সের একটি বিমানে করে ব্রিটেন থেকে ওই ভারতীয় নাগরিককে বহিষ্কার করা হয়। ফরাসি উপকূল থেকে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে আসা অভিবাসীদের আটকাতে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত ‘ওয়ান ইন, ওয়ান আউট’ চুক্তির আওতায় এটিই প্রথম নির্বাসন। এই প্রসঙ্গে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার বলেছেন, 'এটি এমন একটি সমস্যা যা আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছি। আমরা অন্যান্য দেশের সঙ্গে বেশ কয়েকটি চুক্তি করেছি, কারণ এটি পুরো ইউরোপের একটি বড় সমস্যা। আমরা ফ্রান্সের সঙ্গে চুক্তি করেছি এবং গত কয়েকদিনে আপনি এই চুক্তিতে যে চ্যালেঞ্জগুলি দেখেছেন তা সত্ত্বেও, আজ সকাল ৬ টা ১৫ মিনিট নাগাদ একটি ফ্লাইট রওনা হয়েছে এবং তাতে একজনকে সফলভাবে ফেরত পাঠানো হয়েছে।'
‘ওয়ান ইন, ওয়ান আউট’ চুক্তি কী?
গত জুলাইয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ যৌথভাবে ‘ওয়ান ইন, ওয়ান আউট’ পাইলট প্রকল্পটি ঘোষণা করেছিলেন। চুক্তি অনুযায়ী, ছোট নৌকায় ব্রিটেনে পৌঁছে যাদের আশ্রয় আবেদন বাতিল হয়েছে বা গ্রহণযোগ্য নয় বলে ঘোষিত হয়েছে, তাদের ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো হবে এবং প্রতিটি ফেরত পাঠানো ব্যক্তির বিনিময়ে ব্রিটেনে ফ্রান্সে থাকা এমন একজন শরণার্থীকে গ্রহণ করবে, যিনি চ্যানেল পার হওয়ার চেষ্টা করেননি।প্রকল্পটি ‘বিশৃঙ্খল‘ কিনা জানতে চাইলে সরকারি মুখপাত্র বলেন, ‘না, এই পাইলট প্রকল্পের আইনি ভিত্তি নিয়ে আমরা আত্মবিশ্বাসী। স্বদেশীয়ও আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং যে কোন নীতির মতো এটিও আইনি পর্যালোচনার মুখোমুখি হলে আমরা প্রস্তুত আছি।’
হোম অফিস জানিয়েছে, ফ্রান্সে ফেরত পাঠানোর জন্য আটক কিছু আশ্রয়প্রার্থী গুরুতর ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে আছেন। অনেকেই নির্যাতন ও মানবপাচারের শিকার। বিষয়টি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। চুক্তি অনুযায়ী, ফেরত পাঠানো ব্যক্তির চিকিৎসা বা বিশেষ সহায়তার প্রয়োজন আছে কিনা তা ব্রিটেন ফ্রান্সকে জানাবে।ফ্রান্স জানিয়েছে, শুরুতে তারা মাত্র প্রায় ৫০ জনকে গ্রহণ করবে, তবে ব্রিটেন আশা করছে পরবর্তীতে সংখ্যাটি বাড়াতে পারবে।