ইরানকে কোণঠাসা করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিক পদক্ষেপ নয়া দিল্লির জন্য এক নতুন মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তেহরানের উপর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘সর্বোচ্চ চাপ’ নীতির অংশ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের চাবাহার বন্দরের উপর থেকে ২০১৮ সালে দেওয়া বিশেষ ছাড় প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে এই বন্দর ব্যবহারকারী দেশগুলিকে জরিমানার মুখে পড়তে হবে। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপে বিশেষ বার্তা দিয়েছে ভারত সরকার।
শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলনে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, 'আমরা চাবাহার বন্দরের জন্য নিষেধাজ্ঞায় দেওয়া ছাড় প্রত্যাহারের বিষয়ে মার্কিন প্রেস বিবৃতি দেখেছি। বর্তমানে আমরা ভারতের উপর এর কী প্রভাব পড়তে পারে তা পরীক্ষা করছি।' গত ১৬ সেপ্টেম্বর মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বিবৃতি জারি করে জানায়, ইরানকে একঘরে করতে সর্বাধিক চাপ সৃষ্টি করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এবার থেকে যারা চাবাহার বন্দর নিয়ন্ত্রণ করবে কিংবা এই বন্দরে কাজ করবে, তাদের মার্কিনি নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর থেকেই নতুন নিয়ম কার্যকর হতে চলেছে। ওয়াশিংটন চায়, তেহরানের উপরে সর্বোচ্চ চাপ তৈরি করতে। এই বন্দর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ভারত-সহ একাধিক দেশ এই বন্দরের মাধ্যমেই সমুদ্রপথে বাণিজ্য করছে।
ভারতের কাছে চাবাহার বন্দরের গুরুত্ব
ভারতের কাছে চাবাহার বন্দর কেবল একটি বাণিজ্যিক পথ নয়, এটি একটি কৌশলগত লাইফলাইনও বটে। পাকিস্তানের গোয়াদর বন্দরের ঠিক ১৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই বন্দরটি ভারতের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। চাবাহার ভারতকে পাকিস্তানের পাশ কাটিয়ে আফগানিস্তান এবং পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে স্থলপথে বাণিজ্যিক সংযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করে। এটি ভারত থেকে রাশিয়া ও ইউরোপ পর্যন্ত সংযোগকারী আন্তর্জাতিক উত্তর-দক্ষিণ পরিবহন করিডোরের সঙ্গেও যুক্ত।বন্দরটি ইতিমধ্যে আফগানিস্তানে গম ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাঠানোর জন্যও ব্যবহৃত হয়েছে। অপরদিকে পাকিস্তানের গোয়াদর বন্দর পরিচালনা করে চিন। ফলে চাবাহার বন্দরের উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখে ভারত আরব সাগরে চিনের ক্রমবর্ধমান আধিপত্য মোকাবিলা করতে পারে।
২০০৩ সালে প্রথমবার ভারত চাবাহার উন্নয়নের প্রস্তাব দিয়েছিল।এরপর গত ১৩ মে, ২০২৪-এ ইরানের বন্দরের সঙ্গে ১০ বছরের জন্য বন্দর পরিচালনার চুক্তিও স্বাক্ষর করে ভারত। ভারতীয় পোর্টস গ্লোবাল লিমিটেড প্রায় ১২০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে সম্মত হয় এবং আরও ২৫০ মিলিয়ন ডলারের ক্রেডিট লাইন দেওয়ার পরিকল্পনাও ঘোষণা করে। এই প্রথম ভারতের কোনও বিদেশি বন্দরে দীর্ঘমেয়াদি নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু নতুন মার্কিন সিদ্ধান্ত সেই চুক্তির ভবিষ্যতকে অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিল। একদিকে, দীর্ঘদিনের বন্ধু ইরানের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক, অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের কৌশলগত অংশীদারিত্ব। একই সময়ে, ইজরায়েল এবং উপসাগরীয় দেশগুলির সঙ্গেও সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করছে নয়া দিল্লি। এখন ভারতকে যেমন তার বিনিয়োগ রক্ষা করতে হবে, একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতেও ভারসাম্যও বজায় রাখতে হবে।