পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় কমপক্ষে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে সূত্র উদ্ধৃত করে সংবাদসংস্থা পিটিআইয়ের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। পিটিআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের অধিকাংশই পর্যটক। বিস্তারিতভাবে কিছু না জানালেও এক উচ্চপদস্থ কর্তা জানিয়েছেন যে মৃতদের মধ্যে দু'জন বিদেশি এবং দু'জন স্থানীয় বাসিন্দা আছেন। যদিও ঠিক কতজনের প্রাণহানি হয়েছে, তা নিয়ে সরকারিভাবে এখনও কিছু জানানো হয়নি। জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ শুধু জানিয়েছেন যে সাম্প্রতিক সময় সাধারণ নাগরিকদের উপরে যে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে, তার থেকে অনেক ‘বড় কিছু’ হয়েছে।
বুধবার পহেলগাঁওয়ে যেতে পারেন শাহ
আর তারইমধ্যে তড়িঘড়ি কাশ্মীরে এসেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। পহেলগাঁওয়ে হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তিনি শ্রীনগরে পৌঁছে গিয়েছেন। শ্রীনগরে নেমেই সোজা রাজভবনে এসেছেন। আধিকারিকরা জানিয়েছেন, নিরাপত্তা বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্তাদের সঙ্গে শাহের বৈঠক করার কথা আছে। বুধবার তিনি পহেলগাঁওয়ে যেতে পারেন বলেও সূত্র উদ্ধৃত করে পিটিআইয়ের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
চরম পরিণতি হবে জঙ্গিদের, হুঁশিয়ারি শাহের
যিনি শ্রীনগরে রওনা দেওয়ার আগে জঙ্গিদের হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপরে যে জঙ্গি হামলার ঘটেছে, তাতে আমি মর্মাহত। মৃতদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। যারা এই কাপুরুষোচিত জঙ্গি হামলায় জড়িত, তাদের ছাড়া হবে না। আর এই ঘটনায় যারা জড়িত আছে, তাদের যাতে চরম পরিণতি হয়, সেটা আমরা নিশ্চিত করব।’
অপরূপ প্রাকৃতিক নৈসর্গের জায়গায় হত্যালীলা জঙ্গিদের
আর সেই জঙ্গি হামলা চালানো হয়েছে মঙ্গলবার দুপুরে। পিটিআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আধিকারিকরা জানিয়েছেন যে মঙ্গলবার দুপুর তিনটে নাগাদ বৈসরন উপত্যকায় সেই জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে। যা রিসর্ট টাউন পহেলগাঁও থেকে মেরেকেটে ছয় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ঘন পাইন জঙ্গল এবং পাহাড়ের কারণে পর্যটক এবং ট্রেকারদের অন্যতম পছন্দের জায়গাও সেটা। অপরূপ প্রাকৃতিক নৈসর্গের কারণে 'মিনি সুইৎজারল্যান্ড' হিসেবেও পরিচিত।
আর অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রেই জঙ্গিরা হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন আধিকারিকরা। পিটিআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পর্যটকরা যখন নিজের মতো করে উপভোগ করছিলেন, সেইসময় জঙ্গিরা গুলি চালাতে থাকে। এক মহিলা পর্যটক জানান, গুলির শব্দ শুনেই সকলে আতঙ্কিত হয়ে ছুটতে থাকেন। কোনও আচ্ছাদনের পিছনে লুকিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু বিস্তীর্ণ ধূ-ধূ প্রান্তরে লুকিয়ে পড়ার কোনও জায়গাই ছিল না।
‘আমার বরের ঠিক মাথায় গুলি করল'
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যাওয়া একাধিক ছবি এবং ভিডিয়োয় (পৃথকভাবে সত্যতা যাচাই করেনি হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা) দেখা গিয়েছে যে প্রাণহীন দেহ পড়ে আছে। কাঁদছেন মহিলারা। পিটিআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক মহিলা ফোনে বলেন যে ‘আমার বরের ঠিক মাথায় গুলি করল। আরও সাতজন আহত হয়েছেন।’
আর চোখের সামনে এরকম ভয়াবহ ঘটনা দেখে শিউরে উঠেছেন পর্যটকরা। যাঁরা ঘটনাস্থলে ছিলেন, তাঁরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। ভরা পর্যটনের মরশুমে উপত্যকায় থাকা হাজার-হাজার পর্যটক প্রবল আতঙ্কে ভুগছেন। অনেকেই তড়িঘড়ি কাশ্মীর ছেড়ে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রাকেশ শর্মা নামে তেমনই একজন বলেন, ‘এটা স্রেফ কল্পনার বাইরে। আমি জানি না যে কে এখানে থাকবেন বা থাকবেন না। কিন্তু আমি বিন্দুমাত্র ঝুঁকি নিতে চাই না। আমি স্রেফ বাড়িতে ফিরতে চাই।’