সহিংসতার মধ্যেই দুনের এক পরিবহণ ব্যবসায়ীর স্ত্রী মারা গেলেন নেপালে। এরপর ওই ব্যবসায়ীকে সাহায্যের জন্য ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে। স্ত্রীর প্রাণহীন দেহ ভারতে ফেরাতে কাতর আর্তি এই ভারতীয়র। তিনি বলেন, নেপালে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসও তাৎক্ষণিকভাবে সাহায্য করেনি তাঁকে। জানা গিয়েছে দুন ও গাজিয়াবাদে ট্রান্সপোর্ট ব্যবসা চালান রামবীর সিং গোলা। তিনি তাঁর স্ত্রী রাজেশ গোলাকে নিয়ে নেপাল বেড়াতে গিয়েছিলেন। কাঠমান্ডুতে তাঁরা যে হোটেলে ছিলেন, তার বাইরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছিল। দুষ্কৃতীরা হোটেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। মানুষ প্রাণ বাঁচাতে ঘর থেকে ছুটে পালান। সেই সময় রাজেশ চতুর্থ তলা থেকে পড়ে যান। কিন্তু রামবীর তা জানতে পারেননি। তিনি তাঁর স্ত্রীর খোঁজে সর্বত্র ঘুরে বেড়ান। তখনও তিনি জানতেন না যে তার স্ত্রী মারা গেছেন। পরে হাসপাতালে স্ত্রীর লাশ দেখে ভেঙে পড়েন রামবীর। (আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠানে গুলি করে খুন ট্রাম্প ঘনিষ্ঠ চার্লি কার্ককে, দেখুন ঘটনার মুহূর্তের ভাইরাল ভিডিয়ো)
আরও পড়ুন: বড়সড় হামলার ছক দেশে? একাধিক রাজ্য থেকে ৫ জঙ্গি গ্রেফতার, মিলল IED-র অংশ
মৃত মহিলার স্বামী পরিচিতদের ফোনে বলেন, 'মঙ্গলবার রাতের খাবারের পর যখন তারা হোটেলে একসঙ্গে ছিলেন, তখন স্ত্রী খুশি ছিলেন। কিন্তু এখন শুধু স্মৃতি রয়ে গেছে।' এদিকে রামবীরের লড়াই এখনও শেষ হয়নি। স্ত্রীর মরদেহ ভারতে ফিরিয়ে আনার সম্ভাব্য সব উপায় খুঁজছেন তিনি। এদিকে নেপালে আটকে পড়া ভারতীয়দের সহায়তার জন্য লখনউ পুলিশ সদর দফতরে একটি বিশেষ কন্ট্রোল রুম তৈরি করা হয়েছে। একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর সহ তিনটি হেল্পলাইন নম্বর চালু থাকবে ২৪ ঘণ্টা - ০৫২২-২৩৯০২৫৭, ০৫২২-২৭২৪০১৯ এবং ৯৪৫৪৪০১৬৭৪ (হোয়াটসঅ্যাপও করা যাবে এই নম্বরে)। এদিকে নেপালে বসবাসরত ভারতীয় নাগরিকদের 'সতর্কতা অবলম্বন করতে এবং নেপালি কর্তৃপক্ষের জারি করা পদক্ষেপ ও নির্দেশিকা মেনে চলার' পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে। জরুরি পরিস্থিতিতে সাহয়তার জন্য দুটি হেল্পলাইন নম্বরও চালু করা হয়েছে - ৯৭৭-৯৮০৮৬০২৮৮১, ৯৭৭-৯৮১০৩২৬১৩৪। (আরও পড়ুন: 'আর কবে?', নেপালের উল্লেখ করে বিস্ফোরক TMC বিধায়ক হুমায়ুন কবির)
আরও পড়ুন: রাজ্য সরকারি কর্মীদের জন্য বড় খবর, বকেয়া ডিএ মামলার অর্ডার কপি সামনে এল
এদিকে 'জেন জি' বিক্ষোভের সময় পোখারা থেকে এক ভারতীয় নাগরিকের ভিডিয়োও সামনে এসেছে। ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে এক ভারতীয় মহিলা ভারত সরকারের কাছে সাহায্যের আবেদন করছেন। নিজেকে উপাসনা গিল নামে পরিচয় দেওয়া ওই মহিলা দাবি করেছেন, তিনি যে হোটেলে ছিলেন, সেখানে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। তখন তিনি একটি স্পাতে ছিলেন। পরে একদল জনতা লাঠি নিয়ে তাঁর পিছনেও ছুটে যাচ্ছিল। সেই মহিলা আরও জানান যে তিনি একটি ভলিবল লিগ আয়োজনের জন্য নেপালে এসেছিলেন। তিনি বলেন, 'আমার নাম উপাসনা গিল, আমি এই ভিডিয়োটি প্রফুল গর্গকে পাঠাচ্ছি। আমি ভারতীয় দূতাবাসকে অনুরোধ করছি, দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। যারা আমাদের সাহায্য করতে পারেন, দয়া করে সাহায্য করুন। আমি নেপালের পোখারায় আটকা পড়েছি। আমি এখানে একটি ভলিবল লিগ আয়োজন করতে এসেছিলাম এবং বর্তমানে আমি যে হোটেলে থাকতাম সেটি পুড়ে গেছে। আমার সমস্ত লাগেজ, আমার সমস্ত জিনিসপত্র আমার ঘরে ছিল এবং পুরো হোটেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।'
উপাসনা আরও বলেন, 'আমি স্পাতে ছিলাম এবং লোকেরা বড় বড় লাঠি নিয়ে আমার পিছনে দৌড়াচ্ছিল। আমি কোনওমতে আমার জীবন নিয়ে পালাতে সক্ষম হয়েছি। এখানকার অবস্থা খুবই খারাপ। সর্বত্র রাস্তায় আগুন লাগানো হচ্ছে। তারা এখানে পর্যটকদেরও ছাড় দিচ্ছে না। কেউ পর্যটক কিনা বা কেউ এখানে কাজের জন্য এসেছেন কিনা তা নিয়ে তাদের মাথা ঘামায় না। তারা না ভেবে সর্বত্র আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে এবং এখানে পরিস্থিতি খুব, খুব খারাপ হয়ে গেছে। আমরা জানি না কতদিন অন্য হোটেলে থাকব। কিন্তু আমি শুধু অনুরোধ করছি যে দয়া করে এই ভিডিয়ো, এই বার্তা ভারতীয় দূতাবাসের কাছে পৌঁছে দেওয়া হোক। হাতজোড় করে আপনাদের সবাইকে অনুরোধ করছি, দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। এখানে আমার সঙ্গে অনেক মানুষ আছি এবং আমরা সবাই এখানে আটকা পড়েছি।'