দীর্ঘ কর্মজীবনে যেমন স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য পরিচিত ছিলেন, তেমনই মৃত্যুর পরেও নিজেকে উৎসর্গ করলেন অঙ্গদানের মাধ্যমে। রাজ্যের প্রাক্তন স্বাস্থ্য অধিকর্তা সঞ্চিতা বক্সির অঙ্গে নতুন জীবন পেলেন দু’জন। ৭৬ বছরের সঞ্চিতার শনিবার ব্রেন ডেথ হওয়ার পর পরিবার তাঁর অঙ্গদানের অঙ্গীকারকে সম্মান জানায়। ফলত, একজন সিরোসিস রোগী ও একজন কিডনি ফেলিয়োর আক্রান্ত নারী নতুন জীবন ফিরে পেলেন।
আরও পড়ুন: পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহতের SSKMএ ব্রেইন ডেথ, অঙ্গদানের নজির গড়ল পরিবার
তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে সঞ্চিতা রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরে কাজ করেছেন। টিবি ও ম্যালেরিয়ার মতো বহু জনস্বাস্থ্য কর্মসূচিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২০০৬ সালে স্বাস্থ্য অধিকর্তার পদে উন্নীত হন এবং ২০০৯ সালে অবসর নেন। কর্মজীবনে অঙ্গদান ও দেহদানের মতো বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার জন্যও তিনি উদ্যোগী ছিলেন। গত মঙ্গলবার রাতে নিউটাউনের বাড়িতে আচমকা হেমোরেজিক স্ট্রোকে আক্রান্ত হন তিনি। গুরুতর অবস্থায় তাঁকে বাইপাস সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কয়েক দিনের মধ্যেই চিকিৎসকেরা বুঝে যান, তাঁর মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা আর ফেরানো সম্ভব নয়। শনিবার তাঁকে ব্রেন ডেড ঘোষণা করা হয়। এরপরেই পরিবার এগিয়ে আসে অঙ্গদানের সিদ্ধান্তে।
সঞ্চিতার লিভার প্রতিস্থাপিত হয় পিজি হাসপাতালের ৪৮ বছরের এক সিরোসিস আক্রান্ত রোগীর শরীরে। অন্যদিকে, তাঁর দুটি কিডনি স্থানান্তর করা হয় আরএন টেগোর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৪৯ বছরের এক রোগিণীর শরীরে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনি ফেলিয়োরে ভুগছিলেন। দু’জনের অবস্থাই এখন স্থিতিশীল। পাশাপাশি তাঁর কর্নিয়াও সংরক্ষিত রাখা হয়েছে।
সঞ্চিতার জামাই ও চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ রূপক বিশ্বাস জানান, জীবিত অবস্থাতেই তিনি অঙ্গদান করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন। তাই পরিবার তাঁর সেই সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে। রোটো–এর (পূর্বাঞ্চলীয় রিজিওনাল অর্গান অ্যান্ড টিস্যু ট্রান্সপ্লান্ট অর্গানাইজেশন) সমন্বয়ে সম্পূর্ণ প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। সংস্থার দাবি, সঞ্চিতা বক্সি এখনও পর্যন্ত রাজ্যে নথিভুক্ত সবচেয়ে বয়স্ক মরণোত্তর অঙ্গদাতা।
চলতি বছরে পশ্চিমবঙ্গে এখন পর্যন্ত ১৪টি মরণোত্তর অঙ্গদানের ঘটনা ঘটেছে। স্বাস্থ্যকর্তাদের মতে, সরকারি পরিষেবায় তাঁর অবদান এবং অঙ্গদানের মতো মানবিক সিদ্ধান্ত তাঁকে স্মরণীয় করে রাখবে দীর্ঘদিন।