চলতি সপ্তাহে কাঠমান্ডু আকাশরেখা ঢেকে গিয়েছিল কালো ধোঁয়ায়। নেপালের সবচেয়ে উঁচু হোটেল হিলটন কাঠমান্ডু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পরিণত হয় ছাইয়ের খোলসে। 'জেন জি' আন্দোলনে সে দেশের বিক্ষুব্ধ জনতার আগুনে ভস্মীভূত হয়েছে হিলটন কাঠমান্ডু থেকে হায়াত রিজেন্সির মতো বহু বছরের শ্রম আর হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ।
সোমবার ও মঙ্গলবার টানা দুই দিনের জেন জি আন্দোলনের পর নেপালজুড়ে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র ফুটে উঠেছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, সরকারি পরিকাঠামো-সহ বিলাসবহুল হোটেলগুলিতে অগ্নিকাণ্ড এবং হামলায় ক্ষতি হয়েছে ২৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।শুধু তাই নয়, অগিকাণ্ডে হিলটন কাঠমান্ডু এবং হায়াত রিজেন্সিতে কমপক্ষে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।১,৩০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।নগর উন্নয়ন মন্ত্রকের কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সিংহ দরবার (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও সচিবালয়), পার্লামেন্ট ভবন এবং সুপ্রিম কোর্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামোগুলি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলি তৈরিতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছিল।আগুনের গ্রাসে শুধু ভবন নয়, অমূল্য ঐতিহাসিক দলিল-দস্তাবেজ ও সরকারি রেকর্ডও ভস্মীভূত হয়েছে।নেপালে বিক্ষোভকারীরা শুধুমাত্র রাজধানী কাঠমান্ডুর সরকারি পরিকাঠামোই জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেননি। তারা একাধিক প্রদেশের বিধানসভা হল, মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়, জেল, পুলিশ স্টেশন, ভূমি ও রাজস্ব অফিস এবং অসংখ্য পৌর ওয়ার্ডের ভবন পুড়িয়ে দিয়েছেন।
আরও খবর-'দ্য শুটিং অফ চার্লি কার্ক!' খুনের আগেই বিশেষ বই প্রকাশ, ট্রাম্প-মিত্রের হত্যাকারী কে?
২০১৬ সালে শংকর গ্রুপের হাত ধরে শুরু হয়েছিল নেপালের আকাশছোঁয়া হোটেল হিলটনের কাজ। লক্ষ্য ছিল, দেশের আতিথেয়তা শিল্পকে আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছে দেওয়া। নানা বাধা, বিশেষ করে কোভিড মহামারির ধাক্কায় থমকে গিয়েছিল নির্মাণ। অবশেষে প্রায় সাত বছরের চেষ্টার পর, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার বিনিয়োগে দরজা খুলেছিল হোটেলটি। বর্তমানে সেই সব স্বপ্ন ধূলোয় মিশে গেছে। আগুনে পুড়ে গিয়েছে কাচের রঙিন ফিন, উড়ে গেছে জানলার কাচ। হোটেলের অভ্যন্তর সম্পূর্ণ ছাই হয়ে পড়ে আছে। মাত্র কয়েক ঘণ্টার রাগ ও ক্ষোভ ভস্ম করে দিয়েছে বছরের পর বছরের শ্রম, বিনিয়োগ আর কল্পনার ফসল। হিল্টনের একজন মুখপাত্র জানান, বিক্ষোভের সময় যে ক্ষতি হয়েছে, তারপর হোটেলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অতিথি এবং কর্মীদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, নেপালি কংগ্রেসের এমপি রাজেন্দ্র বাজগাইনের মালিকানাধীন বর্ণবাস মিউজিয়াম হোটেলটিও আগুনে ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে। বাজগাইন বলেন, হোটেলের সমস্ত অতিথিকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পরে তিনি এমপি পদ থেকে পদত্যাগ করার ঘোষণা করেন এবং বিক্ষোভকারীদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেন।
আরও খবর-'দ্য শুটিং অফ চার্লি কার্ক!' খুনের আগেই বিশেষ বই প্রকাশ, ট্রাম্প-মিত্রের হত্যাকারী কে?
সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকেই যে বিক্ষোভ শুরু, তা দ্রুত রূপ নেয় দুর্নীতি আর রাজনৈতিক কীর্তিকলাপের বিরুদ্ধে গণআন্দোলনে। প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগ করলেও ক্ষোভ থামেনি। এখনও পর্যন্ত প্রাণ গিয়েছে প্রায় ৫১ জনের, আহতের সংখ্যাও অগুণতি। হিলটন কাঠমান্ডু ধ্বংস তাই শুধু একটি হোটেলের ক্ষতি নয়, বরং নেপালের অস্থিরতার প্রতীক হয়ে যেন ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। একদিকে আশা ও অগ্রগতির স্বপ্ন, অন্যদিকে হতাশা আর ক্ষোভের বাস্তবতা, সেই দ্বন্দ্বের আগুনেই আজ ভস্মীভূত নেপালের সবচেয়ে উঁচু হোটেল।