প্রাচীনত্বের নিরিখে অন্য যে কোনও পুজোকেই টেক্কা দিতে পারে রানাঘাটের এই পুজো। ৭৬৩ বছর আগে এক বিশেষ ঘটনার মধ্যে দিয়ে সূত্রপাত হয় এই পুজোর।
৭৬৩ বছর ধরে পূজিত হন ‘বুড়ো মা’
Durga Puja 2024: ১২৬২ খ্রিষ্টাব্দে শুরু হয় দুর্গাপুজো। প্রাচীনত্বে হার মানাবে বাংলার অন্য যে কোনও পুজোকে। রানাঘাটের ‘বুড়ো মা’-এর পুজো ঠিক এতটাই প্রাচীন। আজও একইরকম নিষ্ঠা সহকারে পূজিত হন মা। ৭৬৩ বছর আগে শর্মা পরিবারে শুরু হয়েছিল এই পুজো। সেই সময়ের বংশধর রামকুমার চক্রবর্তী শুরু করেন ‘বুড়ো মা’-এর পুজো। তবে পুজো শুরু হয়েছিল এক অভিনব উপায়ে। কথিত আছে, ‘বুড়ো মা’-এর পুজোর (Ranaghat Buro Maa Puja) সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক স্বপ্নাদেশ।
শোনা যায়, ১২৬২ খ্রিষ্টাব্দে পদব্রজে রাঢ়বঙ্গ ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন রামকুমার চক্রবর্তী। তিনি ছিলেন মা দুর্গার সেবক। ভ্রমণ শেষে যখন বাড়ি ফিরছেন, সেই সময় শরৎকালের ভরা মরসুম। শারদ আকাশে বেজে উঠেছে দেবীর আগমনী সুর। কথিত রয়েছে, তখনই একদিন মায়ের কাছ থেকে স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন রামকুমার। এর পরই পুজো শুরু করার তোড়জোড় করেন তিনি। আশেপাশের পাঁচ বাড়ি থেকে ভিক্ষা করেন পুজোর জোগাড়ের জন্য। সেই ভিক্ষাকে সম্বল করেই শুরু করেন পুজো। নিজে হাতেই পুজো করেন ‘বুড়ো মা’-এর। ভ্রমণে বেরিয়ে ফেরার সময় তিনি অধুনা ব্রহ্মডাঙা এখনকার রানাঘাটে পৌঁছান। সেখানেই যেহেতু স্বপ্নাদেশ পান, তাই সেখানেই পুজো শুরু করেছিলেন রামকুমার। পরে এই পুজোর নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র। তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় এই পুজো আরও খ্যাতি লাভ করেছিল।
পুজোর আয়োজন শুরু হয় উল্টোরথের দিন থেকে। উল্টোরথের দিন পাটে সিঁদুর মাখিয়ে শুরু হয় প্রতিমা নির্মাণ। চতুর্থীর দিন পাটে ওঠেন সকলের ‘বুড়ো মা’। এর পর পঞ্চমীতে মাকে গয়না পরানোর রীতি। তার পর ষষ্ঠী থেকে শুরু হয়ে যায় পুজো। প্রতিদিনই মায়ের কাছে বিবিধ ভোগ নিবেদনের রীতি রয়েছে। নয়রকম ভাজার সঙ্গে অন্যান্য পদও থাকে সেই নিবেদনের অংশ হিসেবে। প্রতিদিনই মায়ের এই পুজোয় হাজার হাজার মানুষের ভিড় জমে। এমনকি দেশ-বিদেশ থেকেও ভক্তরা এই পুজোয় এসে ভিড় জমান। অনেকের মতে, ‘বুড়ো মা’ বেশ জাগ্রত। তাই ‘বুড়ো মা’-এর কাছে নিজের মনস্কামনা জানালে তা অচিরেই পূরণ হয় বলে জানান ভক্তরা।