সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর প্রায় চার মাস আগে, ফেব্রুয়ারিতে মুম্বই পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছিল অভিনেতার পরিবারের তরফে। পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছিল, সংকটে রয়েছে সুশান্তের জীবন, ঘটে যেতে পারে কোনও বড়সড় দুর্ঘটনা,তারপরেও কোনওরকম ব্যবস্থা নেয়নি মুম্বই পুলিশ। সোমবার ভিডিয়ো বার্তায় সে কথাই বলেন সুশান্তের বাবা কেকে সিং। সেই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসবার কয়েকঘন্টার মধ্যেেই সুশান্তের পরিবার সামনে আনল সেই সব মেসেজের স্ক্রিনশট যা মুম্বই পুলিশ,সেইসময়কার বান্দ্রার ডিসিপিকে পাঠানো হয়েছিল সুশান্তের পরিবারের তরফে।
হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ চালাচালির কথা আগেই স্বীকার করে নিয়েছিল মুম্বই পুলিশ। এবার এই অভিযোগ নিয়ে মুখ খুললেন, মুম্বই পুলিশের ডিসিপি পরমজিত সিং দাহিয়া।তাঁর মন্তব্য ওই কথোপকথনের স্ক্রিনশট শেয়ার করে জনতাকে ভুলপথে চালিত করবার চেষ্টা করছে সুশান্তের পরিবার। তাঁর দাবি, পরিবারের তরফে ফেব্রুয়ারি মাসে যোগাযোগ করে সুশান্তের গার্লফ্রেন্ড রিয়া চক্রবর্তীকে হেফাজতে নিয়ে ‘চড়’ মারতে বলেছিল পরিবার। কারণ রিয়া নাকি সুশান্তের পরিবার থেকে অভিনেতাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছিলেন এবং প্রয়াত অভিনেতার টাকা তছনছ করছিলেন, মিড-ডে'কে এমনটাই জানিয়েছেন মূুম্বই পুলিশের এই উচ্চ পদস্থ আধিকারিক।
'তিনি (সুশান্তের জামাইবাবু) আমরা রিয়া চক্রবর্তীকে চড় মারি এবং রিয়াকে কাস্টডিতে রেখেদি কোনওরকম আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের না করেই'- সেই সময়কার জোন ৯ (বান্দ্রা) ডেপুটি কমিশানার এমনটাই জানিয়েছেন। সুশান্তের পরিবারের তরফে অভিনেতার জামাইবাবু ওপি সিং এই মেসেজ পাঠিয়েছিলেন পমরজিত সিং দহিয়াকে। ওপি সিং নিজে আইএস অফিয়ার, হরিয়ানা পুলিশের ডিআইজি তিনি। সুশান্তের সবচেয়ে বড় দিদি, নীতু সিং (রানিদি)-এর স্বামী ওপি সিং।

মেসেজের সুশান্তের পরিবারের তরফে মুম্বই পুলিশকে জানানো হয়, সুশান্তের জীবন সংকটে রয়েছে। রিয়া চক্রবর্তী এবং তাঁর পরিবার সুশান্তকে ৩ মাস ধরে জোর করে কোনও রিসর্টে নিয়ে গিয়ে আটকে রেখেছ। পরিবারের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন। লেখা রয়েছে, ‘স্ত্রী ভীষণ চিন্তিত ও ভালো আছে কিনা সেই ব্যাপারে’।
‘ফেব্রুয়ারিতে উনি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ পাঠিয়ে আমাকে রিয়াকে পুলিশ স্টেশনে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে বলেন, চড় মারতে বলেন। রিয়া-সুশান্ত লিভ-ইন রিলেশনশিপে ছিল তখন। ওরা চেয়েছিল আমরা রিয়া এবং মিরান্ডা (স্যামুয়েল মিরান্ডা) নামের একজনকে কাস্টডিতে নিই। আমি পরিষ্কার জানিয়েছিলাম লিখিত অভিযোগ দায়েরের কথা। কিন্তু উনি সেটা করেনি’। এরপর সুশান্তের জামাইবাবুর উপর পাল্টা অভিযোগ এনে মুম্বই পুলিশের এই সিনিয়র অফিসার বলেন, ‘ওঁনার মতো সিনিয়র একজন আইপিএস অফিসার ঘটনার ৪৫ দিন পর আচমকাই এইসব কেন বলছেন, যে আমরা ব্যবস্থা নিই নি?’
মুম্বই পুলিশের এই উচ্চ পদস্থ আধিকারিক ‘নোটেট স্যার’ বলে জবাব দিয়েছিলেন তা স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে স্কিনশটে। মেসেজে স্পষ্টই বলা হয়, কয়েকদিনের পরিচয়েই সুশান্তের সঙ্গে থাকতে শুরু করে রিয়া। ডিপ্রেশন থেকে দূরে থাকবার দাবি করে সুশান্তকে রিয়া ও এবং ওঁর পরিবারের সদস্য এয়ারপোর্টের কাছের এক রিসর্টে নিয়ে গিয়ে রেখেছে তিনমাস ধরে। তারপর থেকে ওর সমস্ত কাজ,ব্যবসা সব ওঁরাই দেখছে। এবং ওঁর কেরিয়ার নিম্মমুখী হয়ে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করতে বলে সুশান্তের দিদিকে নাকি ফোনও করেছিলেন অভিনেতা। আমাদের এখানে ২-৩ দিন এসে থেকে গিয়েছে ও। এরপর শ্যুটিংয়ের কিছু কাজ থাকায় ও ফিরে যায়। রিয়া ওর সমস্ত কাছে টিম মেম্বারদের সরিয়ে দিচ্ছে,নিজের ইচ্ছা মতো। ওর তিন নম্বর দিদি, একজন দিল্লিস্থিত আইনজীবী (প্রিয়াঙ্কা সিং) যে হামেশাই ওর কাছে গিয়ে থাকত, সেও খুব চিন্তায় যে ভুলসঙ্গতে জড়িয়ে পড়েছে সুশান্ত এবং ওঁর জীবন সংকটে।
আজ সুপ্রিম কোর্টে রিয়া চক্রবর্তীর পিটিশনের শুনানি।