সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর প্রায় চার মাস আগে মুম্বই পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছিল অভিনেতার পরিবারের তরফে। পরিষ্কারভাবে জানানো হয়েছিল, সংকটে রয়েছে সুশান্তের জীবন, ঘটে যেতে পারে কোনও বড়সড় দুর্ঘটনা,তারপরেও কোনওরকম ব্যবস্থা নেয়নি মুম্বই পুলিশ। সুশান্তের পরিবারের আইনজীবী আগেই এই দাবি করেছিলেন, এরপর সোমবার ভিডিয়ো বার্তায় সে কথাই বলেন সুশান্তের বাবা কেকে সিং। সেই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসবার কয়েকঘন্টার মধ্যেেই সুশান্তের পরিবার সামনে আনল সেই সব মেসেজের স্ক্রিনশট যা মুম্বই পুলিশ,বান্দ্রার ডিসিপিকে পাঠানো হয়েছিল সুশান্তের পরিবারের তরফে। গত ১৯শে এবং ২৫শে ফেব্রুয়ারির হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের স্ক্রিনশট এল প্রকাশ্যে। যেখানে বান্দ্রার সেইসময়কার ডিসিপি পরমজিত সিংয়ের সঙ্গে কথোপকথন হয় সুশান্তের পরিবারের।
ইন্ডিয়া টুডে'তে প্রকাশিত খবর এই তথ্য সামনে এসেছে। মেসেজের সুশান্তের পরিবারের তরফে মুম্বই পুলিশকে জানানো হয়, সুশান্তের জীবন সংকটে রয়েছে। রিয়া চক্রবর্তী এবং তাঁর পরিবার সুশান্তকে ৩ মাস ধরে জোর করে কোনও রিসর্টে নিয়ে গিয়ে আটকে রেখেছ। পরিবারের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন। লেখা রয়েছে, ‘স্ত্রী ভীষণ চিন্তিত ও ভালো আছে কিনা সেই ব্যাপারে’। সুশান্তের পরিবারের তরফে এই মেসেজগুলি পাঠিয়েছিলেন অভিনেতার বড়দিদি নীতু সিংয়ের (রানিদি) স্বামী ওপি সিং। তিনি হরিয়ানা পুলিশের ডিআইজি।
মুম্বই পুলিশের সেই উচ্চ পদস্থ আধিকারিকও ‘নোটেট স্যার’ বলে জবাব দিয়েছেন। মেসেজে স্পষ্টই বলা হয়, কয়েকদিনের পরিচয়েই সুশান্তের সঙ্গে থাকতে শুরু করে রিয়া। ডিপ্রেশন থেকে দূরে থাকবার দাবি করে সুশান্তকে রিয়া ও এবং ওঁর পরিবারের সদস্য এয়ারপোর্টের কাছের এক রিসর্টে নিয়ে গিয়ে রেখেছে তিনমাস ধরে। তারপর থেকে ওর সমস্ত কাজ,ব্যবসা সব ওঁরাই দেখছে। এবং ওঁর কেরিয়ার নিম্মমুখী হয়ে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করতে বলে সুশান্তের দিদিকে নাকি ফোনও করেছিলেন অভিনেতা। আমাদের এখানে ২-৩ দিন এসে থেকে গিয়েছে ও। এরপর শ্যুটিংয়ের কিছু কাজ থাকায় ও ফিরে যায়। রিয়া ওর সমস্ত কাছে টিম মেম্বারদের সরিয়ে দিচ্ছে,নিজের ইচ্ছা মতো। ওর তিন নম্বর দিদি, একজন দিল্লিস্থিত আইনজীবী (প্রিয়াঙ্কা সিং) যে হামেশাই ওর কাছে গিয়ে থাকত, সেও খুব চিন্তায় যে ভুলসঙ্গতে জড়িয়ে পড়েছে সুশান্ত এবং ওঁর জীবন সংকটে।

ভিডিয়ো বার্তাতেও ২৫ ফেব্রুয়ারি মুম্বই পুলিশের কাছে জানানো অভিযোগের কথা বলেন কেকে সিং। যার পরিপ্রেক্ষিতে মুম্বই পুলিশ বিবৃতি জারি করে বলে, কেকে সিং গত ২৫ ফেব্রুয়ারি লিখিত অভিযোগ জানানোর কথা বলেছেন বান্দ্রা পুলিশকে,কিন্তু আমরা জানিয়ে দিতে চাই এমন কোনও অভিযোগ মেলেনি। তবে সুশান্তের জামাইবাবু আইপিএস অফিসার ওপি সিং, সেইসময়কার জোন-৯ এর ডিসিপিকে কিছু হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ পাঠিয়েছিলেন। তাঁকে পাল্টা ফোন করে লিখিত অভিযোগ দায়েরের কথা বলা হয়েছিল কিন্তু তিনি বলেছিলেন বিষয়টি গোপনে খতিয়ে দেখতে।
এরপর তাঁর ট্রান্সফার হয়ে যায়। আপতত জোন নাইনের ডিসিপি অভিষেক ত্রিমুখে। যিনি সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু তদন্তে মুম্বই পুলিশ টিমের দায়িত্বে রয়েছেন।
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে গত বছর দিল্লি হাইকোর্টের দেওয়া রায় অনুসারে কোনও ব্যক্তির জীবনহানির মতো আশঙ্কা প্রকাশ বা অভিযোগ জানালে এই হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ বা ই-মেলও এফআইআর হিসাবে গন্য করা যায়। তাই এই মেসেজ বাইরে আসবার পর থেকেই যথেষ্ট চাপে মুম্বই পুলিশ। সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক ট্রোলিংয়ের মুখে মুম্বই পুলিশের আধিকারিকরা।