সম্প্রতি একটি পোস্টে সৃজিত মুখোপাধ্যায় নাম না করে রাম কমল মুখোপাধ্যায়কে ‘হাইব্রিড মায়েস্ট্রো’ বলে কটাক্ষ করেন। সেটার জবাবে এদিন হিন্দুস্থান টাইমস বাংলাকে কী বললেন রাম কমল মুখোপাধ্যায়?
আরও পড়ুন: তৈরি স্ক্রিপ্ট, তাও রাম কমল কেন বললেন, 'জানি না দ্রৌপদীর ভবিষ্যৎ'? ‘লক্ষ্মীকান্তপুর লোকাল’ আসছে কখন?
সৃজিতের খোঁচা নিয়ে কী জানালেন রাম কমল?
শহরের এক পাঁচতারা হোটেলে অন্যান্য নানা বিষয় নিয়ে আড্ডার মাঝেই উঠে আসে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের বলা কথার প্রসঙ্গটি। রাম কমল মুখোপাধ্যায় জানান তিনি জানেন বিষয়টি। নজরে এসেছে তাঁরও। সেই বিষয়ে বিনোদিনী পরিচালকের জবাব, 'উনি কেন বলেছেন সেটা তো উনিই বলতে পারবেন। উনি একজন প্রথিতযশা পরিচালক। আমি যতদূর জানি, উনি আমাকে ভালোবাসেন। কিন্তু কেন এমনটা বলেছেন জানি না। তবে ওঁর যদি মনে হয় যে আমি হাইব্রিড, তাহলে আমি তাই, কারণ কোন পরিপ্রেক্ষিতে উনি বলেছেন আমি জানি, কাল আমি দেখেছি। উনি যে দুজনের সঙ্গে আমাকে তুলনা করেছেন সেটা মাথা পেতে নিয়ে নেওয়া উচিত কমপ্লিমেন্ট হিসেবে। ঋতুপর্ণ ঘোষ বাংলা ছবিকে আবার জাতীয় স্তরে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন কনটেন্টের উপর জোর দিয়ে। ভারতের এমন কোনও অভিনেতা, অভিনেত্রী ছিলেন না যিনি ওঁর সঙ্গে কাজ করতে চাইতেন না। সেটা তো একটা বিশাল বড় প্রাপ্তি। বনশালি আর ঋতুপর্ণ ঘোষের সঙ্গে তুলনা, আর তাঁদের হাইব্রিড যদি আমি হই, তাহলে তিনি হয়তো ভাবছেন আমাকে খারাপ বলছেন। আমি কিন্তু এটাকে উল্টে প্রশংসা হিসেবেই নিলাম। আমি ধরে নেব পজেটিভলি বলেছেন। আর যদি নেতিবাচক ভাবে বলেন, তাহলে কখনও যদি সম্মুখীন হই তখন জিজ্ঞেস করব যে কেন বলেছেন? কেন এত রাগ?'
রুক্মিণী মৈত্রর সেই ভাইরাল ভিডিয়ো প্রসঙ্গে রাম কমল বলেন, 'রুক্মিণী কখনও বলেনি যে আমি ঋতুপর্ণ ঘোষ বা বনশালির সমতুল্য। এটা বলতেই পারে না। এটা বলা ধৃষ্টতা বা অজ্ঞানতা। ও যেটা বলতে চেয়েছে সেটা হয়তো ভুল বোঝা হয়েছে। দেব যেমনটা ছবির ট্রেলার লঞ্চে ব্যাপারটা গুছিয়ে বলেছিল যে, ও আমার মধ্যে ঋতুপর্ণ ঘোষের এসথেটিক্স আর সঞ্জয় লীলা বনশালির কমার্শিয়াল বোঝাপড়াটা আছে সেটা লক্ষ্য করেছে। এটা প্রযোজক হিসেবে ওর মনে হয়েছিল। আর আমি ঋতুপর্ণ ঘোষ বা বনশালি হতে চাই না। আমি চাই আমার ছবি রাম কমল মুখোপাধ্যায়ের ছবি হিসেবেই পরিচিত হোক। নিজের একটা ধারা তৈরি করতে চাই। তবে আমরা তো কম বেশি সবাই কারও না কারও দ্বারা অনুপ্রাণিত হই। সেটার জন্য যদি আমায় হাইব্রিড বলা হয় তাহলে আমি তাই।'
কী ঘটেছে?
সম্প্রতি সৃজিত মুখোপাধ্যায় রুক্মিণী মৈত্রর একটি সাক্ষাৎকারের ভিডিয়ো শেয়ার করেন। সেখানে তিনি জানিয়ে দেন অভিনেত্রীর কাছে তিনি তাঁর আগামী ছবি ‘লহ গৌরঙ্গের নাম রে’ ছবিটির অফার করলেও, ‘বিনোদিনী’ চরিত্রটি অফার করেননি। বরং অন্য এক চরিত্রের জন্য তিনি ভেবেছিলেন তাঁকে। শুধু তাই নয়, রুক্মিণী যখন বলেন যে 'আমি রাম কমল মুখোপাধ্যায়কে কুর্নিশ জানাই গত পাঁচ বছর ধরে যেভাবে আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন সেটা, আর বলেছিলেন যে আমি যদি নারীকেন্দ্রিক ছবি বানাই তাহলে এই বাজেটেই বানাব, আর রুক্মিণীর সঙ্গেই বানাব সেটার জন্য। উনি যে সাহস দিয়েছেন, সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের মতো পরিচালক যে ওঁকে দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছে সেটাই তো প্রাপ্য বিনোদিনীর।' তখন সেটার জবাবে সৃজিত লেখেন, 'বিনোদিনী চরিত্রটির জন্য আমার প্রথম থেকে শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়কেই পছন্দ ছিল। আর সেটা ২০২০ সালেই ঠিক করা হয়। লহ গৌরাঙ্গের নাম রে ছবিটি লেখা হয় ২০১৯ সালে। এছাড়া বেশ কিছু মহিলাকেন্দ্রিক ছবি যেমন রাজকাহিনী ২০১৫ এবং বেগম জান ২০১৭ সালে লেখা হয়। এটা ঋতুপর্ণ ঘোষ, সঞ্জয় লীলা বনশালি বা কোনও হাইব্রিড ম্যায়েস্ট্রোর থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বানানো হয়নি। বানানো হয়েছে চৈতন্য মহাপ্রভুর জীবন এবং তাঁর সময়ের অনুপ্রেরণায়।'
আরও পড়ুন: বক্স অফিসে দাপট দেখিয়েও শান্তি নেই! ১০০ কোটির মানহানির মামলার হুমকি ভিকির ছাবাকে! কেন?
এই বিষয়ে এও জানিয়ে রাখা ভালো কিছুদিন আগে রুক্মিণী একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, 'রাজদা আমায় বলেছিল রুক্মিণী তুই না একটা জীবন সারা জীবন মিস করবি। আমি বললাম কী? আমায় বলেছিল তোর মতো অভিনেত্রীর না ঋতুদার হাতে পড়া উচিত ছিল। তুই বুঝবি, কেন বলছি। তোরই হতো ঋতুদার সঙ্গে কাজটা। আমি যখন রামের সঙ্গে এই ছবিটা করি, আমাদের এসথেটিকস, ভিশন এতভাবে মেলে যে কী বলি। আমি সবাইকে সম্মান জানিয়েই ছোট মুখে অনেক বড় কথা বলছি, বনশালি আর আমাদের বাংলার ঋতুদা, দুজন মিলে যদি কিছু দিতে পারতো, বা চেষ্টা করতে পারত সেটা হল আমার রাম কমল।' তো সেই কথা টেনেই এদিন যে সৃজিত মুখোপাধ্যায় নাম না করে রাম কমল মুখোপাধ্যায়কে ‘হাইব্রিড মায়েস্ট্রো’ বলে কটাক্ষ করেছেন সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।